যে ছয় পরমাণু বিজ্ঞানী হারালো ইরান

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

বিমান হামলা চালিয়ে ইরানের ছয়জন চৌকস পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে ইসরাইল। শুক্রবারের ভোররাতের হামলায় ইরানের একাধিক পারমাণবিক কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তারা। এতে অংশ নেয় ইসরাইলের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান। যার মাধ্যমে তেহরান ও এর আশপাশের অঞ্চলের শতাধিক স্থানে হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এসব লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ইরানের প্রধান পারমাণবিক কেন্দ্র নাতাঞ্জও রয়েছে।
ইসরাইল দাবি করেছে তেহরানের উপকণ্ঠে অবস্থিত ভূগর্ভস্থ এই পারমাণবিক কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে তাদের বোমা। তারা এখনও হামলা অব্যাহত রেখেছে। পারমাণবিক ইস্যুতে ইরানকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক হুমকি দেয়ার কয়েকদিন পরই তেহরানের পারমাণবিক কেন্দ্র ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে হামলা চালালো ইসরাইল। যা এখন আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বার প্রান্তে রয়েছে। ইসরাইল যে খুব শিঘ্রই হামলা চালাবে তা বৃহস্পতিবারই বুঝা গিয়েছিল। কেননা সেদিন ওই অঞ্চলে মার্কিন দূতাবাসগুলোকে সতর্কবার্তা দেয় হয়েছিল।
এছাড়া ওই দিনই জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা ও আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ঘোষণ দেয় যে, গত ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো পরমাণু বিস্তার রোধের বাধ্যবাধকতা অমান্য করেছে ইরান। যদিও তেহরান বারবার নিশ্চিত করেছে- তারা বেসামরিক উদ্দেশ্যেই এই কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। এ কথা অত্যুক্তি হবে না যে, একসঙ্গে ছয় ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানী হারিয়ে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ইরান।
ইরানের তাসনিম নিউজের বরাত দিয়ে আল জাজিরার এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ওই ছয় বিজ্ঞানীদের দুইজন হলেন, মোহাম্মদ মেহেদি তেহেরানচি ও ফেরদাউস আব্বাসি। এরা দুজনই ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু বিজ্ঞানী। তাত্বিক পদার্থবিদ্যায় বেশ উচুতে ছিলেন তেহরানচি। তিনি ইরানের ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতিও ছিলেন। ২০২০ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বা বৈদেশিক নীতির স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা ব্যক্তিদের তালিকায় যুক্ত করা হয় তার নাম। যেই ভবনটিতে তেহরানচি ও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা অবস্থান করছিলেন সরাসরি সেই ভবন লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছে।
এদিকে আব্বাসি ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান। এছাড়া ইরানের সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলে তিনি। পারমাণবিক পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন আব্বাসি। সর্বশেষ ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পারমাণবিক গবেষণা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন নিহত ওই বিজ্ঞানী। এর আগেও তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। ২০১০ সালে তেহরানে এক জোড়া বিস্ফোরণের সময় বেঁচে গিয়েছিলেন আব্বাসি। তবে সিদিন তার সহকর্মী আরেক পারমাণবিক বিজ্ঞানী মাজিদ শাহরিয়ারি নিহত হন। এর জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে ইরান। তবে তা অস্বীকার করেছে তেল আবিব।
শুক্রবার নিহত অন্যান্য বিজ্ঞানীরা হলেন- আব্দলহামিদ মিনৌচের, আহমেদ রেজা জোলফাগরি, আমির হোসেইন ফাঘিনি ও মোতাল্লেবজাদেহ। এরা সকলেই ইরানের শহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *