শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
ইসরাইলি সেনাবাহিনী ও কর্মকর্তাদের বয়ান বিশ্লেষণ করে হারেৎজ-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভয়াবহ চিত্র- যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং কিছু ইভানজেলিক খ্রিস্টান গোষ্ঠীর হাতে প্রতিষ্ঠিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্রগুলোর চারপাশে অসংখ্য নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গাজায় কর্মরত ইসরাইলি সেনা ও অফিসারদের সাক্ষ্য অনুযায়ী, জিএইচএফের কেন্দ্রগুলোর আশপাশে ক্ষুধার্ত জনতা জড়ো হলেই তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এই কেন্দ্রগুলো চালু হওয়ার মাত্র এক মাসের মধ্যেই, কেন্দ্রগুলোর চারপাশে ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ইসরাইলি সামরিক আইন উপদেষ্টা (মিলিটারি অ্যাডভোকেট জেনারেল) ইতিমধ্যে এই হত্যাকাণ্ডগুলোর তদন্ত দাবি করেছে। ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেসের (আইডিএফ) মুখপাত্রের অফিস হারেৎজ-এর এই প্রতিবেদনের জবাবে ঘটনা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেনি। বরং জানিয়েছে, বেসামরিক হতাহতের বিষয়ে তদন্ত করা হবে।
এই সেনা সদস্যদের সাক্ষ্য ফিলিস্তিনি নাগরিক, চিকিৎসক ও ত্রাণকর্মীদের দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসা অভিযোগের সঙ্গে মিলে যায়। তা হলো জিএইচএফের কেন্দ্রগুলোতে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বরং হারেৎজ-এর এই অনুসন্ধানকে ‘জঘন্য রক্তচক্রের অপপ্রচার’ বলে আক্রমণ করেছেন। কিন্তু তারা জানেন, এই তদন্তের প্রতিটি বাক্যই সত্য, এবং বাস্তবতা হলো- আইডিএফ গাজায় বেসামরিক মানুষের জীবনের প্রতি সম্পূর্ণ অবহেলা প্রদর্শন করছে। জিএইচএফের কার্যক্রম শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী বলে সতর্ক করেছিল বিভিন্ন মানবিক সংস্থা।
অবশেষে দেখা গেল, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলো খোলার পরপরই গুলি চালানো শুরু হয়। এখন গাজার মানুষদের সামনে দুটো পথ- পরিবারের সঙ্গে অনাহারে মৃত্যু, অথবা সহায়তার খোঁজে জীবন ঝুঁকিতে ফেলা। জিএইচএফ কেন্দ্রগুলোর চারপাশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ছাড়াও, গাজায় প্রতিদিন অসংখ্য বেসামরিক মানুষ নিহত হচ্ছেন। হাসপাতাল ও স্কুল ধ্বংস হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা, খাবার ও ওষুধ প্রবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস, অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেয়া, চিকিৎসা সরঞ্জাম অবরোধ- এ সবকিছু ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে। এমনকি গণহত্যার অভিযোগও আর অমূলক নয়।
এ পর্যন্ত গাজায় ৫৬,০০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এর বেশির ভাগই বেসামরিক। তাদের মধ্যে ১৭,০০০ শিশু রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আর বলা যায় না যে আইডিএফ বেসামরিক হতাহত ঠেকানোর চেষ্টা করছে। তাই আইডিএফ প্রধানের নৈতিক দায়িত্ব হলো- গুলি চালানোর নীতি পরিবর্তন করুন, চিফ অফ স্টাফ আয়াল জামিরের এখনই উদ্যোগ নেওয়া উচিত, জিএইচএফের আশপাশে গুলি চালানোর নীতি বাতিল করতে হবে। যেসব কমান্ডার নিরস্ত্র মানুষ হত্যার নির্দেশ দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচার শুরু করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোকে আবার গাজায় ত্রাণ বিতরণের অনুমতি দিতে হবে, যারা যুদ্ধকালেও অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছিল।
গাজার পরিস্থিতি শুধুই মানবিক বিপর্যয় নয়। এটা এখন আর একটি যুদ্ধ নয়- এটা একটি কাঠামোগত ধ্বংসযজ্ঞ, একটি অপরাধ। ত্রাণকেন্দ্রগুলো- যেখানে মানুষ খাদ্যের আশায় ভিড় করে- সেই স্থানেই যদি গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়, তাহলে কোনো সভ্য সমাজে এই কর্মকাণ্ডের পক্ষে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ হতেই হবে। এখনই।