মুুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে তৎকালীন সভাপতির স্বাক্ষর ও সীল জালজালিয়াতির মাধ্যমে পাঁচ শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগে পুনঃতদন্ত করেছেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক খন্দকার মো. নাহিদ হাসান। বুধবার (১৬ জুলাই) সকালে ভজনপুর নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে এই তদন্ত পরিচালনা করা হয়। জানা যায়, চলতি বছরের গত মে মাসের ৫ তারিখ সোমবার ৫৭.০৩.০০০০.২৮.০০৩.১৭-২০২৫-৩০৬ নং স্বারকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পিআইডব্লিউ) রুটিন দায়িত্ব প্রকৌশলী মো. মাকসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত তদন্ত কর্মকর্তা মনোনয়ন পত্রে উপজেলার ভজনপুর নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে তৎকালীন সভাপতির স্বাক্ষর ও সীল জালজালিয়াতির মাধ্যমে পাঁচ শিক্ষক নিয়োগের সাম্প্রতিক এমপিও পাওয়া শিক্ষকদের বেতন-ভাতার অফিস আদেশ জারিসহ তা স্থগিত রেখে তদন্ত কর্মকর্তা মনোনয়নের আদেশ করেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর(ডিটিই)। পরে চলতি বছরের গত মে মাসের ১৮ তারিখ রোববার কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক খন্দকার মো. নাহিদ হাসান সরেজমিনে তদন্ত করেন। এরপর কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর(ডিটিই) পূনরায় সরেজমিনে অধিকতর তদন্ত পূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ করেন রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালককে।
উল্লেখ্য যে, এর আগে চলতি বছরের ৫ মে সোমবার বেলা ১১ টায় উপজেলার ভজনপুর নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে তৎকালীন সভাপতির স্বাক্ষর ও সীল জালজালিয়াতির মাধ্যমে পাঁচ শিক্ষক নিয়োগের সাম্প্রতিক এমপিও বাতিল চেয়ে এলাকাবাসী বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছেন।
ওই সময় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে এলাকাবাসী বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান নিজেই নিয়মিত কলেজে আসেননা। তিনি নিয়োগ বাণিজ্যের বিনিময়ে অবৈধভাবে ৫ শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। যাদের কলেজের দাঁড়েও আসতে দেখেননি তাঁরা। শুধু তাই নয়, যে প্রধান শিক্ষকের থাকার মত উপযুক্ত জায়গা ছিলনা সে আজ অবৈধ উপায়ে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে পঞ্চগড়ে গড়ে তুলেছেন বাসা বাড়ী। অনতিবিলম্বে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত পাঁচ শিক্ষকের এমপিও বাতিলসহ বিদ্যালয় মাঠে পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত অংশীদারদের জমিজমা বুঝে দিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোরদার দাবি তুলে ধরেন তাঁরা।
আরও জানা যায়, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হয়। যার কলেজ কোড নং ১১০২৩ ও ই.আই.আই.এন নং হচ্ছে ১৩২৮৫৩। প্রথমে বৈধতার সাথে গত ২০০৬ সালের জুন মাসের ২৫ তারিখ ৯জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ পেলে দ্বিতীয় বার ওই সালের জুলাই মাসের ২৯ তারিখে ৫জন শিক্ষককে অবৈধ কাগজপত্রের প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেন অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান। প্রতিষ্ঠান প্রধানের জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ দেখানো সাম্প্রতিক এমপিও প্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন- বাংলা বিষয়ের প্রভাষক বিমল কুমার রায়, কম্পিউটার আপারেশন বিষয়ের প্রভাষক সফিকুল আলম, সাচিবিকবিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক দিলিয়ারা বেগম, ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রভাষক দিলারা বেগম এবং নিম্নমান সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক/কম্পিউটার অপারেটর উম্মে বিনতে সালমা।
তদন্তকালে তদন্তকর্মকর্তার কাছে প্রায় অর্ধশতাধিক এলাকাবাসীর লোকজন গণস্বাক্ষরিত অভিযোগ/বক্তব্য পেশ করেন। যেখানে বলা হয়েছে, ওই প্রতিষ্ঠানে পাঁচ শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে ও নিয়োগ দেওয়া সম্পর্কে তারা কিছুই জানেননা এবং তারা কেউ পাঁচ শিক্ষককে চিনেননা। এছাড়া ওই পাঁচ শিক্ষক অত্র প্রতিষ্ঠানে এসেছিলেন বলে এলাকার কেউ দেখেন নাই।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী আব্দুস সালাম প্রধান বলেন, তিনি অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষককে কলেজের ত্রি-সীমায় কখনো আসতে দেখেননি এবং তাদের নিয়োগ বিষয়ে কোনো কিছুই জানেননা।
এ ব্যাপারে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক খন্দকার মো. নাহিদ হাসান বলেন, তিনি সরেজমিনে এসে যা জানতে পেরেছেন তাই তিনি অধিদপ্তরে প্রেরণ করবেন।