শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যই জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় তাদের হামলায় নিহত ছয়জন ফিলিস্তিনির মধ্যে পাঁচজনই বেসামরিক নাগরিক। ইসরাইলের +৯৭২ ম্যাগাজিনের হিব্রু ভাষার সহযোগী প্রকাশনা লোকাল কল ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের যৌথ অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
যৌথ প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গোপন গোয়েন্দা ডেটাবেসে নাম-পরিচয়সহ আট হাজার ৯০০ জন হামাস ও ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) যোদ্ধাকে নিহত বা ‘সম্ভবত নিহত’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সেই সময় ইসরাইলি বাহিনীর হাতে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ছিল প্রায় ৫৩ হাজার। অর্থাৎ, গাজায় নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে মাত্র ১৭ শতাংশ যোদ্ধা, আর বাকি ৮৩ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক।
+৯৭২ ম্যাগাজিন ও লোকাল কলের এই পরিসংখ্যান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এই ধরনের ডেটাবেসের অস্তিত্ব অথবা নিহত হামাস ও পিআইজে’র যোদ্ধাদের সংখ্যা নিয়ে কোনো আপত্তি জানায়নি। কিন্তু পরে যখন গার্ডিয়ান একই তথ্যের জন্য যোগাযোগ করে, তখন একজন মুখপাত্র বলেন, সামরিক বাহিনী তাদের প্রতিক্রিয়া ‘পুনরায় ব্যাখ্যা’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ওই মুখপাত্র বলেন, প্রতিবেদনে যে সংখ্যাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। তবে কোন তথ্য ভুল, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। শুধু বলেছেন, সংখ্যাগুলো সেনাবাহিনীর ‘সিস্টেমে’ থাকা তথ্যের প্রতিফলন নয়। একই তথ্য নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন গণমাধ্যমকে ভিন্ন উত্তর দেয়ার কারণও সেনাবাহিনী ব্যাখ্যা করেনি।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ডেটাবেসে মোট ৪৭ হাজার ৬৫৩ জন ফিলিস্তিনির নাম রয়েছে। তাদের হামাস ও পিআইজের সক্রিয় সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ইসরাইলি গোয়েন্দারা। তারা বলছে, এই তথ্যগুলো গাজা থেকে উদ্ধার করা হামাস ও পিআইজের অভ্যন্তরীণ নথির ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। তবে এসব নথি গার্ডিয়ান, +৯৭২ ম্যাগাজিন বা লোকাল কল- কোনোটিই দেখতে পায়নি বা যাচাই করতে পারেনি।
তালিকায় হামাসের ৩৪ হাজার ৯৭৩ জন এবং পিআইজের ১২ হাজার ৭০২ জন সদস্যের নাম রয়েছে। এর মধ্যে আট হাজার ৯০০ জনকে নিহত ধরা হয়েছে। নিশ্চিতভাবে নিহত বলা হয়েছে, সাত হাজার ৩৩০ জনকে, আর এক হাজার ৫৭০ জনকে ধরা হয়েছে ‘সম্ভাবত নিহত’ হিসেবে।
এর আগে, লোকাল কল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যাকে ইসরাইলও নির্ভরযোগ্য বলে ধরে নেয়। দেশটির সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধানও সম্প্রতি সেই হিসাব উদ্ধৃত করেছেন।
নতুন তদন্তে উল্লেখ করা হয়েছে, বাস্তবে নিহত বেসামরিক নাগরিকের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। কারণ, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব শুধু উদ্ধার হওয়া লাশের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। ভবন বা অন্যান্য স্থাপনার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া হাজারো লাশ এতে অন্তর্ভুক্ত নেই।
আবার এটাও সম্ভব যে ইসরাইলি গোয়েন্দারা তাদের তালিকায় শুধু হামাসের সাথে যোগাযোগ থাকার অভিযোগে অনেক সাধারণ মানুষকেও যোদ্ধা হিসেবে দেখাতে পারেন। এর মধ্যে পুলিশ সদস্য বা গাজার প্রশাসনিক কাজে যুক্ত ব্যক্তিরাও থাকতে পারেন, যাদের আন্তর্জাতিক আইনে যোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা যায় না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমনও হতে পারে, ইসরাইলি কর্মকর্তারা এমন ফিলিস্তিনিদেরও অন্তর্ভুক্ত করেছেন যাদের হামাস বা পিআইজের সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
একটি উদাহরণ টেনে বলা হয়েছে, ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ড তার সেনাদের অনুমতি দিয়েছে, তারা চাইলে যাচাই-বাছাই ছাড়াই নিহত ফিলিস্তিনিদের যোদ্ধা হিসেবে রিপোর্ট করতে পারেন।
এছাড়াও মে মাসের পরিসংখ্যানের পর থেকে বেসামরিক মৃত্যুর অনুপাত বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ মে মাসেই আন্তর্জাতিক সাহায্য গোষ্ঠীর পরিবর্তে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন গাজায় ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আধুনিককালের যুদ্ধে এভাবে ৮৩ শতাংশ বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা বিরল। এমনকি সিরিয়া ও সুদানের দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধেও এই হার এত বেশি ছিল না।
সূত্র : মিডল ইস্ট আই