মোঃনূরুল ইসলাম সবুজ, গাজীপুরঃনা
গাজীপুরে নতুন ষষ্ঠ সংসদীয় আসন ঘোষণাকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তাবে গাজীপুরের আসন সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয়টিতে উন্নীত হওয়ায় বিএনপি, জামাতসহ বিভিন্ন মহল শুকরিয়া জানিয়েছে এবং এ সিদ্ধান্তকে যুগোপযোগী ও সময়ের দাবি হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত ঢাকা অঞ্চলের শুনানিতে গাজীপুরের প্রতিনিধিরা ক্ষুদ্র কিছু দাবি-আপত্তি তুললেও সার্বিকভাবে ইসির প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানান। শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন, চার কমিশনার এবং সচিব আখতার আহমেদ। এ সময় গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক একেএম ফজলুল হক মিলন বলেন, “দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হওয়ায় আমরা কৃতজ্ঞ। বর্তমান নির্বাচন কমিশনাররা সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতায় অনন্য। সময়োপযোগী এ সিদ্ধান্তের জন্য গাজীপুরবাসী কৃতজ্ঞ।” তিনি আরও আশ্বাস দেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে।
অন্যদিকে বুধবার বিকেলে গাজীপুর মহানগর জামাত কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মহানগর জামাতও আনুষ্ঠানিকভাবে শুকরিয়া আদায় করে। মহানগর জামাতের আমির অধ্যাপক জামাল উদ্দিন সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “টঙ্গী, গাছা ও পুবাইল নিয়ে নতুন আসন সৃষ্টি হওয়া গাজীপুরবাসীর দীর্ঘদিনের ন্যায্য চাহিদার প্রতিফলন। জনসংখ্যার চাপ, ভৌগোলিক বাস্তবতা ও নাগরিক প্রয়োজনের কারণে এটি আরও আগেই হওয়া উচিত ছিল। এই সিদ্ধান্ত জনগণের প্রতিনিধিত্ব, মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, উন্নয়নের গতি এবং গণতান্ত্রিক চর্চাকে আরও শক্তিশালী করবে।”
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর জামাতের নায়েবে আমির মোঃ হোসেন আলী, সহকারী সেক্রেটারি মোঃ আফজাল হোসাইন ও আজহারুল ইসলাম, গাজীপুর সদর মেট্রো থানা আমির এবং গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের জামাত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী সালাহ উদ্দিন আইউবী, অফিস সেক্রেটারি আবু সিনা নুরুল ইসলাম মামুন, মহানগর গণপরিষদ সদস্য ও টঙ্গী পূর্ব থানা আমির মোঃ নজরুল ইসলাম, বাসন থানা সাবেক আমির মোঃ রফিকুল ইসলাম, সদর মেট্রো কর্ম পরিষদ সদস্য শরিফুল ইসলাম এনামুলসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এছাড়া গাজীপুর জেলা জামাতের আমির ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন,
গাজীপুর দেশের সবচেয়ে জনবহুল এলাকা। এখানে ১ টি আসন বৃদ্ধির ফলে গাজীপুরের মানুষ উপকৃত হবে। আমরা আসন বৃদ্ধিতে নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি আগামীতে কমিশন সততা ও আন্তরিকতা দিয়ে একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হবে।
প্রস্তাবিত আসন বিন্যাসঃ
গাজীপুর-১ কালিয়াকৈর উপজেলা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১–১২ নম্বর ওয়ার্ড
গাজীপুর-২ গাজীপুর সিটির ১৩–৩৩ নং ওয়ার্ড এবং গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন ।
গাজীপুর-৩ শ্রীপুর উপজেলা, গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর, ভাওয়ালগড় ও পিরুজালী ইউনিয়ন এবং গাজীপুর সেনানিবাস।
গাজীপুর-৪ কাপাসিয়া উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন।
গাজীপুর-৫ কালীগঞ্জ উপজেলার একটি পৌরসভার ও সাতটি ইউনিয়ন।
গাজীপুর-৬ (নতুন আসন) গাজীপুর সিটির ৩৪–৫৭ নম্বর ওয়ার্ড
গত ৩০ জুলাই সংসদীয় আসনের খসড়া সীমানা প্রকাশ করে ইসি। এতে ভোটার ভারসাম্য আনতে গাজীপুরে নতুন একটি আসন যোগ করা হলেও বাগেরহাটের আসন কমিয়ে চার থেকে তিন করা হয়। সারাদেশ থেকে এক হাজার ৭৬০টি আপত্তি ও প্রস্তাব জমা পড়ে। ২৪ আগস্ট শুরু হওয়া শুনানি ২৭ আগস্ট পর্যন্ত চলবে, এরপর চূড়ান্ত সীমানা ঘোষণা করবে ইসি।
গাজীপুরে আসন বৃদ্ধির এ প্রস্তাব শুধু রাজনৈতিক ভারসাম্য নয়, উন্নয়নের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। বিএনপির ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এবং জামাতের শুকরিয়া প্রকাশকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নির্বাচন কমিশনের প্রতি বিরল আস্থার প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন।