ব্যাংক চালান ছাড়াই সার্ভার কপি বিতরণে দেবীগঞ্জ নির্বাচন অফিস প্রশ্নবিদ্ধ

দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসে ব্যাংক চালান ছাড়াই জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার কপি দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি সার্ভার কপি পেতে ২৩০ টাকা সরকারি ফি ব্যাংকে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, দেবীগঞ্জ নির্বাচন অফিসে কোনো আবেদন বা ব্যাংক চালান ছাড়াই সরাসরি সার্ভার কপি সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে সরকারের রাজস্ব বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি অফিসের ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

সম্প্রতি নীলফামারী জেলার ডোমার থানার বাসিন্দা মোছাঃ সেলিনা বেগমের সার্ভার কপি দেবীগঞ্জের বাসিন্দা রাকিব ইসলাম নামে একজন ২৫ আগস্ট দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে ব্যাংক চালান ছাড়াই সার্ভার কপি সংগ্রহ করেন। অথচ এ সংক্রান্ত কোনো আবেদনপত্র বা ব্যাংক চালানের রশিদ অফিসে পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন উঠেছে, অন্য জেলার একজন নাগরিক কিভাবে দেবীগঞ্জ থেকে সার্ভার কপি সংগ্রহ করলেন? এটি নিয়মবহির্ভূত হওয়ায় ব্যাপক সন্দেহ তৈরি করেছে।

ঘটনার বিষয়ে গণমাধ্যম অনুসন্ধান শুরু করলে ২৬ আগস্ট অফিসে গিয়ে জানতে চাইলে মুকুল ও মোস্তফা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। আরও জানা যায়, ২৫ আগস্ট ব্যাংক চালান ছাড়াই সার্ভার কপি দেওয়ার পর ঘটনাটি ফাঁস হয়ে গেলে ২৮ আগস্ট তারা ব্যাংকে দুইশত ৩০ টাকা জমা দিয়ে বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করেন।

এ ঘটনায় স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মোঃ মুকুল ইসলাম এবং স্ক্যানিং এন্ড ইকুইপমেন্ট মেইনটেনেন্স অপারেটর মোঃ মোস্তফা কামাল দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের অনিয়ম চালিয়ে আসছেন। তারা শুধু রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন না, বরং সরাসরি অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত সুবিধা নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বর্তমানে দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মোট ৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন। তবে অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন মুকুল ও মোস্তফা।

এই বিষয়ে মুকুল ইসলাম বলেন, অডিটের ঝামেলা এড়াতে আমি চালান জমা দেই। চালান জমা দিলে যে এত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে আগে বুঝিনি।

এই বিষয়ে মোস্তফা কামাল বলেন, আপনারা এই বিষয়টি নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছেন কেন। কিছু জানার থাকলে অফিসে এসে জেনে নিবেন।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রোস্তম আলী বলেন, প্রথম দিন অভিযোগ আসার পর আবেদন ও শুধু দেবীগঞ্জ উপজেলার ভোটারদের এনআইডি সার্ভার কপি প্রদানে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এখন থেকে প্রতিটি আবেদন আমি নিজেই যাচাই করে সার্ভার কপি প্রদান করব।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, এই ধরণের একটি তদন্ত ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। আর সাম্প্রতিক বিষয়টি নিয়ে আমি অফিসে কথা বলে দেখব। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি আরো ইফেক্টিভ হয়।

সচেতন মহল বলছে, এ ধরনের অনিয়ম শুধু রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ক্ষতির কারণ নয়, বরং জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথির ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তারা দ্রুত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে নির্বাচন অফিসের একটি সূত্র নিশ্চিত করে, গত রবিবার (৩১ আগস্ট) ভিন্ন উপজেলার অন্তত ১০ জন ব্যক্তি এনআইডি সার্ভার কপির জন্য নির্বাচন অফিসে এলেও নির্বাচন কর্মকর্তা তাদের ফেরত পাঠান। এই সংখ্যা থেকে স্পষ্ট হয়েছে, সার্ভার কপিকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে রমরমা বাণিজ্য চলে আসছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *