তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন অবশ্যই জরুরি– উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, তামাক যে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সেটি এখন প্রমাণিত সত্য। তামাক একটি প্রাণঘাতী দ্রব্য। ধূমপায়ী ব্যক্তি যেমন এই ক্ষতির শিকার, তেমনি তার আশেপাশে যারা থাকেন পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ ধূমপায়ী হিসেবে তারাও এই ক্ষতির শিকার হন। তিনি বলেন এ ভয়ংকর তামাকের আগ্রাসনে বিবিএসের তথ্যমতে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। এজন্য আজকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবিতে এখানে সমবেত হওয়া তরুণ- তরুণী এবং নারী ও শিশুদের সাথে আমিও একাত্বতা প্রকাশ করছি। তিনি বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের করা অবশ্যই জরুরি।

তিনি আজ বিকালে ঢাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে নারী মৈত্রী কর্তৃক আয়োজিত ‘তরুণ-তরুণী, নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

সেমিনারে নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শবনম মোস্তারী , স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) মোঃ আখতারউজ জামান, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক, শের-ই- বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স এন্ড প্লান্ট ব্রিডিং ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক তনুশ্রী হালদার, তামাক বিরোধী শিক্ষক ফোরাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. খালেদা ইসলাম, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব শিবানী ভট্টাচার্য্য এবং ইয়ুথ ফোরামের প্রতিনিধি তাসফিয়া নওরীন, রাইসুল ইসলাম রিফাত বক্তৃতা করেন। সেমিনারে নারী মৈত্রী টোবাকো কন্ট্রোল প্রজেক্টের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নাছরিন আকতার প্রোগ্রামের বিষয়বস্তুর ওপর উপস্থাপনা করেন ।

উপদেষ্টা বলেন, তরুণ তরুণী, নারী ও শিশুরাই আগামীর কান্ডারি। আর নারীরা হলো সেই কান্ডারি গড়ার কারিগর। এই শিশু, তরুণ ও নারীদের সুস্থ্য রাখার অন্যতম শর্ত হলো তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা। এ লক্ষ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। তাই আমি অবিলম্বে প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাশ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, তামাকের আগ্রাসনে প্রতিদিন ৪৪২ জনের প্রাণ যাচ্ছে। এতো মহামারী। একটা রাষ্ট্র এতটা উদাসীন হতে পারে না। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাস নিয়ে সরকারের মধ্যে যে দ্বিমত আছে তা খন্ডন করতে হবে। এই সংশোধনী পাস না হলে আমাদেরকেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

সেমিনারে জানানো হয়, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ (সংশোধীত ২০১৩) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল এফসিটিসি-এর সাথে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বেশ কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব করে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনাগুলো হলো— পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বা স্মোকিং জোন নিষিদ্ধ করা, সকল ধরনের তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন ও বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষা করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের সচিত্র সতর্কবার্তা শতকরা ৯০ ভাগ বৃদ্ধি করা।

সেমিনারে অন্যান্য বক্তারা প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো পাস হলে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে, প্রস্তাবিত আইনটি পাস হলে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতা দূর হবে, এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি’র সুপারিশসমূহের কার্যকর বাস্তবায়ন এবং বৈশ্বিক সর্বোৎকৃষ্ট অনুশীলনের আলোকে বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি বৈশ্বিক মানদন্ডে উপনীত হবে এবং জনস্বাস্থ্যে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *