আজ ১২ রবিউল আউয়াল মহানবী (স.) আগমন দিবস

এম আনোয়ার হোসেন:
একনজরে মহানবী (সা.) যুগে যুগে যেসব মহামানব পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়ে মানবজাতিকে সৎপথে পরিচালিত করেছেন, পেয়ারা নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাদের মধ্যে অন্যতম ।
জন্ম ও বংশপরিচয় : ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে আরবের বিখ্যাত কোরাইশ বংশে নবীজি (সা.)-এর জন্ম। তার বাবার নাম আবদুল্লাহ এবং মায়ের নাম বিবি আমিনা ।
বাল্যকাল : নবীজি (সা.)-এর জন্মের আগেই তার বাবা আবদুল্লাহ পরলোক গমন করেন। ছয় বছর বয়সে তিনি মাকেও হারান। মাতার মৃত্যুর পর পিতামহ আবদুল মুত্তালিব এবং চাচা আবু তালিব তাকে লালনপালন করেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি চিন্তাশীল, পরোপকারী ও সত্যবাদী ছিলেন। সত্যবাদিতার জন্য লোকে তাকে ‘আল-আমিন’ বা ‘বিশ্বাসী’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।
শৈশব থেকেই মহানবী ছিলেন সহজ সরল ও কোমল স্বভাবের অধিকারী। সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, ধর্মবোধ প্রভৃতি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন তিনি। সত্যবাদিতার জন্য শৈশবেই তিনি ‘আল আমিন’ বা ‘বিশ্বাসী’ উপাধিতে ভূষিত হন।
নবুয়ত লাভ : নবীজি (সা.) কোনো মক্তব বা পাঠশালায় শিক্ষালাভের সুযোগ পাননি । তিনি আল্লাহপ্রদত্ত জ্ঞানে মহাজ্ঞানী ছিলেন। চারদিকে অন্যায়, অত্যাচার, ব্যভিচার ও মনুষ্যত্বের অবমাননা থেকে কী করে মানবজাতিকে শান্তির পথে নিয়ে আসা যায়, এ চিন্তা করে তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানে মগ্ন হন । ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে চল্লিশ বছর বয়সে জিব্রাইল (আ.)-এর মাধ্যমে আল্লাহর বাণী লাভ করেন।
ইসলাম প্রচারঃ
নবুয়তপ্রাপ্তির পর নবীজি আল্লাহর আদেশে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। প্রথমে বিবি খাদিজা ঈমান এনে মুসলমান হন। তারপর ইসলাম গ্রহণ করেন আবু বকর (রা.), আলী (রা.), জায়েদ বিন হারেস প্রমুখ। ক্রমেই মক্কায় মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে কুরাইশরা তার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং তাকে হত্যার জন্য ষড়যন্ত্র করতে থাকে।
মদিনায় হিজরতঃ-
মক্কায় ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে কুরাইশদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অবশেষে নবীজি (সা.) আল্লাহর আদেশে ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় হিজরত করেন। এ হিজরতের তারিখ থেকে হিজরি সাল গণনা করা হয়।
মক্কা বিজয় ও বিদায় হজঃ-
মদিনায় ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও নবীজির প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধিতে মক্কার কুরাইশরা শঙ্কিত ও ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠে। মহানবী শুধু একজন ধর্মপ্রচারকই ছিলেন না, তিনি একজন শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক, দূরদর্শী রাজনীতিবিদও ছিলেন। তার দূরদর্শিতার কারণে মক্কার ইহুদিদের সঙ্গে তার একটি চুক্তি হয়। তা ‘হুদাইবিয়ার সন্ধি’ নামে পরিচিত। অবশেষে তিনি ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে ১০ হাজার মুজাহিদসহ বিনা রক্তপাতে মক্কা জয় করেন। শত্রু-মিত্র সবাই হজরতের ক্ষমার মহিমায় ও আদর্শে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে। মক্কা বিজয়ের পর তিনি লক্ষাধিক সাহাবি নিয়ে পবিত্র হজ পালন করেন।
ওফাত : হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মহাপুরুষ। তিনি ৬৩ বছর বয়সে, হিজরি একাদশ বছরে, ১২ রবিউল আউয়াল তারিখ (৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জুন) সোমবার দ্বিপ্রহরে ওফাত লাভ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *