মেহেরপুর এলজিইডি প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যাপক,দুর্নীতির অভিযোগ

ইসলাম অল্ডাম,মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি:

মেহেরপুর জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। বিভাগীয়ভাবে বিষয়টি এখন তদন্তাধীন রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর এলজিইডি কার্যালয়ের হিসাব রক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি পদটিতে যোগদান করেন। তিনি দাবি করেছেন, নির্বাহী প্রকৌশলী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ঠিকাদারি বিল প্রদানের ক্ষেত্রে ঘুষ ও অনৈতিক টাকা আদায়ের প্রথা চালু করেন।
অভিযোগে বলা হয়, ঠিকাদারি বিলের ওপর শতকরা ০.৫০% হারে ‘পিডি সাহেবদের’ নামে এবং অফিসের জন্য আরও ১.৫০% হারে টাকা তোলার নির্দেশ দেন প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন। মিজানুর রহমান এতে আপত্তি জানালে তাকে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। পরে সেই অর্থ নিজে তুলে আত্মসাৎ করেন তিনি।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, তিনি নিয়মিত সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন—প্রতিদিন কুষ্টিয়া-মেহেরপুর যাতায়াত ছাড়াও সপ্তাহে একাধিকবার ঢাকায় গিয়ে থাকেন। গাড়িচালকদের ওভারটাইম বিলেও অনিয়ম রয়েছে; যেখানে নির্বাহী প্রকৌশলী ৬০% এবং চালকরা ৪০% ভাগ পেতেন বলে দাবি করা হয়েছে। এসব বিলের কোনো সঠিক লগবই মেনটেইন না করে মন গড়া বিল তৈরি করা হয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
দাপ্তরিক খাতে বরাদ্দ পাওয়া অর্থের অর্ধেকেরও কম অফিস খরচে ব্যয় হয়, বাকি অর্থ আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। দোকানের নামে বিল ইস্যু করে চেকের টাকা নগদ তুলে নিজেই ভোগ করেন প্রকৌশলী।
এছাড়া টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ঠিকাদারদের কাছ থেকে শতকরা ২% হারে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কেউ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়।
এই দুর্নীতির প্রতিবাদে কয়েকজন ঠিকাদার সরাসরি তার কক্ষে গিয়ে প্রতিবাদ জানালে এক পর্যায়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে তিনি ক্ষমা চেয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন বলে জানা গেছে।
তার অনিয়ম ও আচরণের কারণে সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রব ও উচ্চমান সহকারী নূরুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে অন্যত্র বদলি হয়েছেন।
অভিযোগকারী মিজানুর রহমান বলেন, “আমি দুর্নীতির বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় আমাকে মেহেরপুর থেকে ভোলার দৌলতখান উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।  এমনকি বেতন-ভাতাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, “আমি অবৈধ বিল স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানালে ড্রাইভার হাফিজুর রহমানকে দিয়ে আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করানো হয়।”
অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব ও তদন্ত কর্মকর্তা আবুল খায়েরমোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ খানকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি ২০২৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ২ টায় শুনানির তারিখ নির্ধারণ করলেও রহস্যজনক কারণে তা অনুষ্ঠিত হয়নি।
এ বিষয়ে একাধিক ঠিকাদাররাও সহমত প্রকাশ করে জানিয়েছেন। অফিসের ফোরম্যান সিরাজুল ইসলাম ও অফিস সহায়ক রফিকুল ইললামের মাধ্যমে এই দুর্নীতির অধিকাংশ কাজ পরিচালিত করা হয়।
মিজানুর রহমান বলেন, “আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এই দুর্নীতির প্রতিকার ও নির্বাহী প্রকৌশলীর বদলি চাই। না হলে পিরোজপুর জেলার মতো মেহেরপুরেও ভয়াবহ দুর্নীতির বিস্তার ঘটবে।”
অভিযুক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাখাওয়াত হোসেন জানান, ৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও যুগ্মসচিব আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ খান এঁর দপ্তরে উপস্থিত হয়েছিলাম। বর্তমান অবস্থা কি পর্দায়ে রয়েছে তা সেখান থেকেই জেনে নিন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *