প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় জাল সনদ প্রমাণ হওয়া শিক্ষিকার চাকুরীতে ইস্তফা

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

জাল সনদ প্রমাণিত হওয়ায় চাকুরী ছেড়ে চলে যাওয়ার পাঁয়তারা করছেন ফাতেমা বেগম নামের এক শিক্ষিকা। তার শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জাল বলে যাচাই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর তাকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) পার্থ কুমার। সম্প্রতি নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) তার সনদ জাল বলে প্রতিবেদন দিয়েছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, গত আওয়ামী সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা আবু খালেক দুলু তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে ২০০৬ সালের পাশকৃত ২য় শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিয়ে ২০০৮ সালে নিয়োগ নিয়ে দেন। এরপর তিনি ২০২০ সালে উচ্চতর স্কেল গ্রহণ করেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা যাচাইয়ের জন্য প্রেরণ করেন। যাচাই শেষে গত ১৩ অক্টোবর এনটিআরসিএ থেকে তার সনদ জাল বলে প্রতিবেদন দেন। এরপর তিনি গত ১৮ অক্টোবর প্রধান শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত পার্থ কুমারের সাথে লিয়াজু করে চাকুরীতে ইস্তফাপত্র জমা দেন। এ পর্যন্ত তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাকে অবৈধভাবে সরকারি কোষাগার থেকে এ পর্যন্ত অর্থ আত্মসাৎ করায় সহযোগিতা করেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) পার্থ কুমার। সর্বশেষ তিনি ওই শিক্ষিকার মাধ্যমে ভুয়া একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখিয়ে চাকুরী থেকে ইস্তেফা দিতে সহায়তা করেন এবং তার কাছে থেকে ইস্তফাপত্র জমা নেন।
এর আগে স্থানীয় ব্যাক্তির করা অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তার কাগজপত্র জমা নেন। এরপর তিনি কালক্ষেপণ করতে থাকেন। সর্বশেষ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওই জাল শিক্ষিকাকে জাল সনদে চাকুরীতে সহায়তা করায় তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর আরও একটি অভিযোগ দেওয়া হয়। এরপর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল এর হস্তক্ষেপে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তার শিক্ষক নিবন্ধন সনদ যাচাইয়ে প্রেরণ করেন। এরমধ্যে ওই জাল সনদধারী শিক্ষিকা কৌশলে একবার অসুস্থতা দেখিয়ে ১ মাস মেডিক্যাল ছুটি নেন। ছুটি শেষে তিনি চাকুরী করতে অপারগতা দেখিয়ে প্রধান শিক্ষকের সহায়তায় চাকুরী থেকে পদত্যাগ করেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠানো গত ১৩ অক্টোবর এনটিআরসিএ থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, ফাতেমা বেগম ২০০৬ সালের বাংলা বিষয়ে ২য় শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ২১০১০১১৭ রোল নম্বর সম্বলিত দাখিলকৃত প্রত্যয়নপত্রটির সাথে এ প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত ফলাফলের মিল নাই। সংগত কারণে প্রতীয়মান হয় প্রত্যয়নপত্রটি সঠিক নয়। দাখিলকৃত প্রত্যয়নপত্রটি জাল ও ভুয়া। তিনি জাল/জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। উক্ত জাল ও ভুয়া প্রত্যয়নপত্রধারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংযুক্ত ছক মোতাবেক এনটিআরসিএ কার্যালয়ে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এবিষয়ে জানতে চাইলে জাল সনদধারী শিক্ষক ফাতেমা বেগম কোন মন্তব্য করেননি। এক পর্যায়ে তিনি মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন।
জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) পার্থ কুমার বিভিন্ন তালবাহানা করেন।
জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের সভাপতি অলি বলেন, সে চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছে সেটা আমি জানিনা। তার সনদ জাল প্রমাণিত হয়েছে এখন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আমি অফিসিয়ালি কোন চিঠি এখনো হাতে পাইনি। চিঠি পেলে নির্দেশ মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *