গাজীপুরে গোপন কসাইখানায় ঘোড়া জবাই

মোঃনূরুল ইসলাম সবুজ গাজীপুরঃ

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিতভাবে সরবরাহ করা হতো ঘোড়ার মাংস। প্রতি রাতে জবাই হতো ৩০ থেকে ৪০টি ঘোড়া। এই ভয়ঙ্কর ও নিষিদ্ধ ব্যবসার হদিস মিলেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের হায়দারাবাদ এলাকায়। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দিবাগত রাতে সেখানে অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিপুল পরিমাণ ঘোড়ার মাংস এবং জবাইয়ের জন্য প্রস্তুত রাখা ৩৭টি রোগাক্রান্ত ঘোড়া জব্দ করেছে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদ। জেলা প্রশাসন, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, র‌্যাব-১ ও টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় এক কসাইখানায় এ অভিযান পরিচালিত হয়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে কসাইখানার মালিক শফিকুল ইসলাম (৪৫) ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, শফিকুল ও তার বাবা জয়নাল আবেদিন প্রায় এক বছর ধরে হায়দারাবাদ (রথখলা) এলাকায় ভাড়া বাড়িতে ঘোড়া কিনে এনে নিয়মিতভাবে জবাই করতো। নিষিদ্ধ এ মাংস বিভিন্ন উপায়ে রাজধানীর উত্তরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। ঘোড়া জবাইয়ের শব্দ, দুর্গন্ধ ও পরিবেশ দূষণে স্থানীয়রা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন, বারবার প্রতিবাদ করলেও কোনো ফল হয়নি। তারা এ ধরনের ভয়াবহ ও অমানবিক কাজের স্থায়ী নিষিদ্ধকরণ এবং কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, এটি সম্পূর্ণ অবৈধ ও দণ্ডনীয় কাজ। শফিকুলকে এর আগেও তিনবার জরিমানা করা হয়েছিল, তবুও সে থামেনি। এবার বড় পরিসরে অভিযান চালানো হয়েছে। ভবিষ্যতেও অভিযান চলবে। নিষিদ্ধ প্রাণী জবাইয়ের অভিযোগে মামলা করা হবে।

তিনি আরও জানান, জবাই করে বিক্রির উদ্দেশ্যেই ঘোড়াগুলো আনা হয়েছিল। ঘটনাস্থল থেকে কাউকে আটক করা না গেলেও উদ্ধার করা ৩৭টি রোগাক্রান্ত জীবিত ঘোড়া এবং জবাই করা ৮টি ঘোড়ার প্রায় ৫ মণ মাংস স্থানীয় এক ব্যক্তির জিম্মায় রাখা হয়েছে। বুধবার সকালে সেগুলো প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কাছে হস্তান্তর করা হবে। উদ্ধার হওয়া ঘোড়াগুলোর অধিকাংশই রুগ্ণ এবং তাদের মাংস মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

র‌্যাব-১-এর পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হায়দারাবাদ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। দীর্ঘদিন ধরে গোপনে ঘোড়া জবাইয়ের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। অভিযানে জীবিত ঘোড়া, জবাইয়ের সরঞ্জাম ও মাংস সংরক্ষণের প্রমাণ মেলে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুতে একই এলাকায় ঘোড়ার মাংস বিক্রির ঘটনা সামনে আসার পর জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এটি নিষিদ্ধ করেছিল। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ফের গোপনে শুরু হয় এই নৃশংস ব্যবসা, যা এবার বড় আকারে ধরা পড়ল প্রশাসনের হাতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *