সোনারগাঁয়ে বিএনপির দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাড়িঘর ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগে আতঙ্কিত জনপদ

আনিসুর রহমান, সোনারগাঁ:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের আষাঢ়িয়ার চর এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার৷ ৬ নভেম্বর ২০২৫ রাত ৯টার দিকে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়রা জানান, পুরো এলাকা এক সময় যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাঘ বাটোয়ারা’ এবং স্থানীয় দুটি কোম্পানির (মেঘনা গ্রুপ ও আল মোস্তফা কোম্পানি) কাজের দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতা আব্দুর রউফ ও তাঁর ভাই আব্দুল জলিলের মধ্যে। এ বিরোধ থেকেই বৃহস্পতিবার রাতে দুই পক্ষের অনুসারীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালায়।

সংঘর্ষে উভয় পক্ষের লোকজন ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। অন্তত ১২টি বাড়ি ভাঙচুর, চারটিতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে অন্তত তিনজন আহত হন। আহতদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, বুধবার রাত থেকেই দুই ভাইয়ের বিরোধ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেদিন রাতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতেই রউফ গ্রুপের লোকজন জলিল গ্রুপের ওপর হামলা চালায়। এসময় জলিল গ্রুপের সারোয়ার হোসেন ও সজীবের বাড়িসহ অন্তত চারটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে সোনারগাঁ ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে তাদের কাজে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

আব্দুর রউফ বলেন, জলিল ও তার লোকজন গত রাতে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। আমাদের ওপর দায় চাপানো হচ্ছে।
অন্যদিকে আব্দুল জলিল অভিযোগ করে বলেন, রউফ গ্রুপ পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে, মালামাল লুট করেছে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দুই ভাইয়ের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে উত্তেজনা চলছিল। প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের মধ্যস্থতা না থাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

সোনারগাঁ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জানান, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি। কিছু সময় আমাদের কাজে বাধা দেওয়া হয়। পরে সাধ্যমতো চেষ্টা করে আগুন নেভানো হয়।

সোনারগাঁ থানা পুলিশের কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উভয় পক্ষের নেতা আব্দুর রউফ ও আব্দুল জলিলকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ঘটনায় এলাকায় এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *