শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
দেশের সাস্টেইনেবিলিটি অগ্রগতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক চিহ্নিত করে কন্ট্রোল ইউনিয়ন বাংলাদেশ শেরাটন ঢাকায় দেশের প্রথম কার্বন নিউট্রাল সাস্টেইনেবিলিটি কনফারেন্স ২০২৫ এর আয়োজন করে। “সেইপিং এ সাস্টেইনেবল ফিউচার টুগেদার” প্রতিপাদ্যকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানটিতে ৫০ টিরও বেশি টেক্সটাইল ব্র্যান্ড এবং দেশ-বিদেশ থেকে আগত ৫০০-এর অধিক অতিথি, অংশীদার, শিল্পনেতা ও সাস্টেইনেবিলিটি এক্সপাট অংশ নেন।
কনফারেন্সে সাপ্লাই চেইন জুড়ে দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক চর্চা অগ্রসর করতে কন্ট্রোল ইউনিয়নের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতিকে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়। বৈশ্বিক সাস্টেইনেবিলিটি ট্রেন্ড, উদীয়মান প্র্যাকটিস এবং ব্যবসাগুলো কীভাবে কন্ট্রোল ইউনিয়নের সাথে যৌথভাবে আরও টেকসই ও স্থিতিশীল অপারেশন গড়ে তুলতে পারে—তা উপস্থাপন করতে আঞ্চলিক ও স্থানীয় টেক্সটাইল বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
কন্ট্রোল ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছিলেন এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের রিজিওনাল চেয়ারম্যান মিঃ ডার্ক টাইচার্ট এবং কন্ট্রোল ইউনিয়ন বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ফখরুল ইসলাম খান।
একটি বিশেষ সেশনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বাংলাদেশের সেই অগ্রণী প্রতিষ্ঠানগুলো, যারা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো গ্লোবাল গ্যাপ, ও.বি.পি (ওশেন বাউন্ড প্লাস্টিক),নাটিভা এবং ইউএসডিএ -এনওপি সহ বিশ্বের শীর্ষমানের সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে। তাদের সাফল্য রিজেনারেটিভ এগ্রিকালচার, রেসপন্সিবল সোর্সিং, অর্গানিক উৎপাদন এবং প্লাস্টিক রিসাইক্লিং এর মতো খাতে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান নেতৃত্বকে প্রতিফলিত করে।
সাস্টেইনেবিলিটি ইকোসিস্টেম এর উল্লেখযোগ্য সংস্থাগুলো: যেমন বেটার কটন ইনিশিয়েটিভ এর ট্রেসেবিলিটি সাপ্লাই চেইন ম্যানেজার এবং রিজেনএগ্রি এর রিজিওনাল রিপ্রেজেন্টেটিভ ফর এশিয়া ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে। তাদের অভিন্ন বার্তায় উঠে আসে এই বাস্তবতায় বিশ্ব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে, এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ব্যবসাগুলোকে উদ্ভাবন, অভিযোজন এবং পরিবেশগত প্রভাব কমানোর সমাধানে বিনিয়োগ করতে হবে।
মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, জনাব ইনামুল হক খান । তিনি জানান, আন্তর্জাতিক ক্রেতারা এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং প্রোডাকশন সিস্টেম আধুনিকায়নে আরও গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু এই রূপান্তর বাস্তবায়নে যে বিনিয়োগ প্রয়োজন—তা উচ্চ সুদের হার এবং দীর্ঘমেয়াদি সবুজ অর্থায়নের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক কারখানার জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কনফারেন্সে কি-নোট স্পিচ প্রদান করেন হেড অফ ট্রেড এন্ড ডেভেলপমেন্ট, নিকোলাস জান (কুস) ডিজকস্ট্রা, এম্ব্যাসি অফ দি কিংডম অফ দি নেদারল্যান্ডস ইন বাংলাদেশে
বক্তারা ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকির প্রেক্ষাপটে দায়িত্বশীল পদক্ষেপ গ্রহণের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তারা শিল্পখাতকে রিজেনারেটিভ প্র্যাকটিস গ্রহণ, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং বর্জ্য ও নিঃসরণ কমানোর প্রযুক্তি ব্যবহারে অনুপ্রাণিত করেন। কনফারেন্সের মূল লক্ষ্য ছিল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেবল নিয়ম মেনে চলার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সাস্টেইনেবিলিটি তে অগ্রণী ভূমিকা পালনে অনুপ্রাণিত করা।
ইভেন্টের কার্বন নিউট্রাল স্ট্যাটাস কন্ট্রোল ইউনিয়নের নিজস্ব পরিবেশগত দায়বদ্ধতাকে আরও সুস্পষ্ট করে—যা দেখায়, প্রকৃত প্রভাব সৃষ্টি শুরু হয় প্রতিটি স্তরে দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে।
কন্ট্রোল ইউনিয়ন বাংলাদেশের সাস্টেইনেবিলিটি কনফারেন্স এখন দেশের অগ্রসরমনা, সহযোগিতামূলক এবং সাসটেইনেবল ইভেন্ট আয়োজনের এক নতুন মানদণ্ড হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের ব্যবসায়িক খাতকে আরও টেকসই ভবিষ্যতের পথে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে নিতে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
কন্ট্রোল ইউনিয়ন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সার্টিফিকেশন, ইন্সপেকশন এবং টেস্টিং প্রতিষ্ঠান, যার প্রধান কার্যালয় নেদারল্যান্ডসে। অর্গানিক, রিসাইক্লিং, টেক্সটাইল, ফুড সেফটি, সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স এবং এনভায়রনমেন্টাল সার্ভিস —এসব খাতে তারা অগ্রদূত। ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা ৮০টির বেশি দেশে এবং ২৭৪টিরও বেশি অফিসের মাধ্যমে সেবা প্রদান করছে।