পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে টিকে থাকা শুধু ডিগ্রি দিয়ে সম্ভব নয়- প্রয়োজন সততা, নিষ্ঠা, সৃজনশীলতা, ভালোবাসা, দায়বোধ এবং দৃঢ় চরিত্র – উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, বর্তমান সমাজ বহু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, পরিবেশ হুমকির মুখে এবং মানবকল্যাণ আরও জরুরি হয়ে উঠেছে। এই পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে টিকে থাকা শুধু ডিগ্রি দিয়ে সম্ভব নয়- প্রয়োজন সততা, নিষ্ঠা, ভালোবাসা, দায় বোধ, সৃজনশীলতা ও দৃঢ় চরিত্র। আজ সমাজে এমন তরুণদের প্রয়োজন যারা কেবল পেশাগত ক্ষেত্রে দক্ষ নয়, বরং নৈতিকভাবে দৃঢ়, উদার, মানবিক আর দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ।

আজ রবিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমাবর্তন কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয় এটি একটি যাত্রার সফলতার স্বীকৃতি, একটি স্বপ্নের পূর্ণতা এবং আগামী দিনের দায়িত্ববোধের নতুন সূচনা। আজকের এই সাফল্য তোমাদের যাত্রার শেষ নয় বরং শুরু মাত্র। তোমরা এমন এক পৃথিবীতে প্রবেশ করতে যাচ্ছ যেখানে প্রযুক্তি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। তার সাথে তাল মিলাতে হবে। সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো, ন্যায়বিচার করা, দুর্বলকে সহায়তা করা, সমাজকে নিজের অংশ হিসেবে দেখা এবং দেশের প্রতি দায়িত্বশীল থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষাগুলোই তোমাদের প্রকৃত শক্তি।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি তোমরা সমাজের সকল প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম, আত্মবিশ্বাসী এবং প্রস্তুত। স্মরণ রাখবে, শিক্ষা তখনই সফল যখন তা মানুষের কল্যাণে আসে, সমাজে আলো ছড়ায়- তোমার পরিচয় শুধু পেশায় নয় বরং নৈতিকতায় উজ্জ্বল হয়।

স্নাতকদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করে তিনি বলেন, যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন তাদের নির্ভর করতে হয় সঠিক তথ্য, জ্ঞান ও গবেষণার উপর। গবেষণা ছাড়া কোনোভাবেই বৈজ্ঞানিক ও যৌক্তিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব না। এই উত্তরাঞ্চল প্রচন্ড পিপাসার্ত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠের পানি এতটাই নিচে নেমে গেছে যে সেখানে আর্সেনিকের প্রকোপ প্রকট হয়ে উঠেছে। এই বিষয় নিয়ে এখানে প্রায়োগিক গবেষণা হওয়া খুব জরুরি। এসময় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি পানি সংকট নিয়ে গবেষণা করার অনুরোধ জানান।

শিক্ষায় মেয়েদের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সাফল্য হলো এখানে নারীরা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি আত্মবিশ্বাস নিয়ে উচ্চশিক্ষায় যুক্ত হচ্ছে। এটি একটি জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের অপরিহার্য ভিত্তি। একজন শিক্ষিত নারী শিক্ষিত পরিবার গঠন করে। শিক্ষিত পরিবার হলো সচেতন সমাজ ও সভ্য রাষ্ট্র গড়ে তোলার শক্তি। এই বিশ্ববিদ্যালয় শুধু জ্ঞান বিতরণ করছে না, এটি নারী ক্ষমতায়নের একটি শক্তিশালী কেন্দ্র হয়ে উঠছে। এসময় তিনি যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একটি কমিটি গঠনের আহ্বান জানান। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, যেখানে নারী নির্যাতন সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. খাদেমুল ইসলাম মোল্যা। সমাবর্তনের মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক গবেষক ও প্রকৌশল বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. একরাম হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। এছাড়া বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান সমাবর্তনে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির ডিন, বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, অভিভাবকবৃন্দ এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
উল্লেখ্য, এবারের সমাবর্তনে স্নাতক (অনার্স) ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৫ হাজার ৩৮৪ জন গ্রাজুয়েট ডিগ্রি গ্রহণ করেন। কৃতিত্বপূর্ণ শিক্ষার্থীদের চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল ও ভাইস-চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *