জাতিসংঘে ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনায় রাশিয়া ও চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভেনেজুয়েলার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও অর্থনৈতিক চাপের তীব্র সমালোচনা করেছে রাশিয়া ও চীন। মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ওয়াশিংটনের এমন আচরণকে ‘আগ্রাসী’ এবং ‘ভীতি প্রদর্শন’ হিসেবে অভিহিত করেছে দেশ দুটি।

মস্কো ও বেইজিংয়ের সমর্থনে ভেনেজুয়েলা নিরাপত্তা পরিষদের এই জরুরি বৈঠকের ডাক দেয়। বৈঠকে ভেনেজুয়েলা অভিযোগ করে, ওয়াশিংটন তাদের ইতিহাসের ‘সবচেয়ে বড় চাঁদাবাজি’ শুরু করেছে।

জাতিসংঘ থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

ক্যারিবীয় অঞ্চলে বিশাল সামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি নৌ-অবরোধের নামে ভেনেজুয়েলার তেলবাহী বেশ কিছু ট্যাঙ্কারও জব্দ করেছে তারা।

মঙ্গলবার বৈঠকে এসব সমালোচনার জবাবে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ বলেন, ‘আমাদের অঞ্চল, সীমান্ত এবং আমেরিকান জনগণকে রক্ষা করতে যুক্তরাষ্ট্র তার ক্ষমতার সবকিছুই প্রয়োগ করবে।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ, ভেনেজুয়েলা তাদের প্রধান সম্পদ তেল বিক্রি করে ‘মাদক-সন্ত্রাস, মানবপাচার, হত্যা ও অপহরণ’ কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন করছে।

তবে মাদক পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে কারাকাস। তারা বলছে, নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করে ভেনেজুয়েলার বিশাল তেল সম্পদ দখল করাই ওয়াশিংটনের আসল উদ্দেশ্য। ভেনেজুয়েলায় বিশ্বের বৃহত্তম তেলের মজুদ রয়েছে।

জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।’

মার্কিন অবরোধকে ‘আগ্রাসন’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটনের এই ‘কাউবয় সুলভ আচরণের’ ফলে যে ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে, তার দায় তাদেরই নিতে হবে।’

চীনের প্রতিনিধি সান লেই বলেন, ‘চীন যে কোনো ধরনের একতরফা সিদ্ধান্ত ও দাদাগিরির বিরোধী। সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় মর্যাদা রক্ষায় আমরা সকল দেশের পাশে আছি।’

ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রদূত স্যামুয়েল মনকাডা বৈঠকে বলেন, ‘আমরা এমন এক শক্তির মুখোমুখি হয়েছি যারা আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা করে না। তারা ভেনেজুয়েলাবাসীকে নিজ দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলছে এবং দেশটিকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।’ তিনি একে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চাঁদাবাজি বলে অবহিত করেন।

অন্যদিকে মাইক ওয়াল্টজ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ‘নিকোলাস মাদুরো মার্কিন বিচারব্যবস্থার দৃষ্টিতে একজন পলাতক আসামি এবং একটি বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন ‘কার্টেল দে লস সোলেস’-এর প্রধান।’

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নামের কোনো সুশৃঙ্খল বা সঙ্ঘবদ্ধ গোষ্ঠীর অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ নেই।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র মাদুরোকে গ্রেফতার করতে পারলে ৫০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে মার্কিন সরকার। গত সেপ্টেম্বর থেকে মার্কিন বাহিনী এমন বহু নৌযানে বিমান হামলা চালিয়েছে যেগুলোতে মাদক পরিবহন করা হচ্ছে বলে ওয়াশিংটন দাবি করেছে। যদিও এর পক্ষে কোনো শক্ত প্রমাণ তারা দেয়নি। এসব হামলায় এ পর্যন্ত ১০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *