শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
গাজা উপত্যকায় পুনরায় আক্রমণ শুরু করার পাশাপাশি সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলজুড়েও দখলদারিত্ব অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। গোলান উপত্যকার পর প্রতিবেশী ভ‚খণ্ডের এই অংশটুকু গিলে খেতে সেই পুরাতন কৌশলেই এগুচ্ছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী।
স্থল হামলা প্রসারিত-সিরিয়ার আসাদ সরকার পতনের পর থেকে দেশটির বিভিন্ন স্থানেও তাণ্ডব চালাচ্ছে বর্বর সেনারা। সেখানেও চলছে হত্যাযজ্ঞ, দখলদারিত্ব।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে স্থল আক্রমণ আরও জোরদার করেছে। তবে এবার ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে অস্ত্র হাতে নিয়েছেন সিরিয়ার দক্ষিণের শহর দারার বাসিন্দারা। এপি।
সম্প্রতি সিরিয়ার দক্ষিণে বিমান হামলা এবং স্থল হামলা বাড়িয়েছে ইসরাইল। সিরিয়ার ভূখণ্ডেও মাইলের পর মাইল অগ্রসর হয়েছে। জমি ও ঘরবাড়ি দখল করছে, কৃষকদের হত্যা করছে এবং এই অঞ্চলের জনসংখ্যাকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। সিরিয়ার মাটিতে ঘাঁটিও স্থাপন করেছে তারা। এছাড়া সিরিয়ার দক্ষিণে সম্পূর্ণরূপে সামরিকীকরণের দাবিও করেছে ইসরাইল।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটি সামরিক অনুষ্ঠানে নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমরা কুনেইত্রা, দারা এবং সুওয়াইদা প্রদেশসহ দক্ষিণ সিরিয়া সম্পূর্ণ সামরিকীকরণের দাবি করছি।’
এ বিষয়ে ইসরাইলের সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে সমঝোতার সুরে আলোচনার চেষ্টা করেছে সিরিয়ার সশস্ত্র সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। সংগঠনটির একজন সাবেক সদস্য জানিয়েছেন, ‘আমরা ইসরাইল বা অন্য কোনো পক্ষের সঙ্গে কোনো সংঘাত চাই না এবং আমরা সিরিয়াকে আক্রমণের ক্ষেত্র হতে দেব না।
এর আগে গত ডিসেম্বরে সিরিয়ায় ইসরাইলি আক্রমণের প্রথম ঢেউয়ের পর দেশটির প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বলেছেন, ‘সিরিয়ার জনগণের স্থিতিশীলতার জন্য সময়কাল প্রয়োজন। অতএব, হামলা বন্ধ করতে হবে এবং তাদের (ইসরাইলি সেনা) সিরিয়া প্রত্যাহার করা উচিত।’
এরপর থেকেই শারা তেল আবিবের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছেন। একই সঙ্গে সিরিয়ার ভ‚খণ্ড থেকে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। এই প্রচেষ্টা সত্ত্বে, ইসরাইলি উপস্থিতি কেবল আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে দেশটিতে।
দারার পাশাপাশি কুনেইত্রা শহরেও তাণ্ডব চালাচ্ছে দখলদার সেনারা। সেখানেও ঘটছে বাড়িতে বাড়িতে অভিযান, আটক, সামরিক চেকপয়েন্টে নির্যাতন, চুরি ও হয়রানির ঘটনা।
ইসরাইলি সেনারা জীবনযাত্রাকে অসহনীয় করে তুলেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
কুনেইত্রার স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আল-ফাহাদ বলেছেন, ইসরাইলি অনুপ্রবেশ শুরুর পর থেকে কুনেইত্রার আল-হুরিয়া এবং আল-রুওয়াদি অঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করা হয়।
বেসামরিকদের অপমান করা, বাড়িঘর তল্লাশি করা, নির্বিচারে গুলি চালানো, স্থানীয়দের ভয় দেখানো সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন আল-ফাহাদ।
তিনি আরও বলেছেন, স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সঙ্গে কথা না বলার জন্য বেসামরিকদের প্রতিনিয়ত হুমকিও দেওয়া হয়। সম্প্রতি দখলদার সেনাবাহিনী কুনেইত্রা অঞ্চলের সুসিয়াহ গ্রামেও হামলা চালানোর চেষ্টা করে। বাসিন্দারা তাদের ব্যক্তিগত অস্ত্র ব্যবহার করে দখলদার বাহিনীর মুখোমুখি হয়। তাদের তাৎক্ষণিকভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। যার ফলে সাতজন আহত হয়।
কুনেইত্রার কাছে আল-রাফিদ গ্রামের ৪৭ বছর বয়সী ওমর হানুন বলেছেন, আমরা সবেমাত্র একটি যুদ্ধ শেষ করেছি। কিন্তু আমাদের দেশকে রক্ষা করার জন্য ইসরাইলের সঙ্গে আরেকটি যুদ্ধ শুরু করতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।
২৫ ফেব্রুয়ারি ইসরাইলি সামরিক অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে একটি বেসামরিক বিক্ষোভের সংগঠক ছিলেন হানুন। শুরু দিকে সবাই ভয়ে ভয়ে দিন পার করলেও এখন প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে সিরিয়াজুড়ে ইসরাইলি ভয়, স্থানচ্যুতি এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে এখনো।