উত্তোলন সংরক্ষণে ক্ষতি ১০ লাখ টন পেঁয়াজ

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

প্রতিবছর উত্তোলন ও সংরক্ষণের সময়ই নষ্ট হচ্ছে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ। ফলে চাহিদা মেটাতে ৯ থেকে ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে। ক্ষতির পরিমাণ কমানো গেলে আমদানি কমানো সম্ভব। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। এছাড়া পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যও কমবে। দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ লাখ টন। উৎপাদন ২৫ লাখ টনের বেশি। নানাভাবে পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় ঘাটতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
‘মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের নিবিড় পরিবীক্ষণ সমীক্ষায় এসব তথ্য তুলে ধরেছে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। সংস্থাটির নিয়োগ দেওয়া ইস্কাফ কনসালটিং সার্ভিসেসের গত মার্চে জমা দেওয়া দ্বিতীয় খসড়া প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিশেজ্ঞরা বলেন, পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থার অভাব। এজন্য আলাদা সংরক্ষণাগার নেই। কৃষক জানেন না আধুনিক পদ্ধতিতে কীভাবে সংরক্ষণ করতে হয়। তারা বাড়িতেই প্রাচীন পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করেন। এতে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়। এছাড়া মাঠ থেকে পেঁয়াজ তোলার ক্ষেত্রেও আধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ হয় না। ফলে এ সময়ও প্রচুর পরিমাণে নষ্ট হয়। সব মিলে বছরে নষ্ট পেঁয়াজের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ লাখ টন।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদনটি তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত আইএমইডির পরিবীক্ষণ ও মূল্যায় সেক্টর-৪-এর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, প্রতিবেদনটি সম্পর্কে এ মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। আগামী মাসের মাঝামাঝি চূড়ান্ত করা হবে। এর পরই ওয়েবসাইটে দিয়ে ওপেন করা হবে। তখন সবাই বিস্তারিত জানতে পারবেন। পেঁয়াজের উৎপাদন ও সংরক্ষণে ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, দেখি শেষ পর্যন্ত কনসালটিং ফার্ম কী রিপোর্ট জমা দেয়। এরপরই বলতে পারব।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫০৩ হাজার একর জমিতে পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল ২৫ লাখ ৪৭ হাজার টন। কিন্তু দেশে এর বার্ষিক চাহিদা ২৬ লাখ টন। এরপরও প্রতিবছর ৯ থেকে ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। যার অধিকাংশই আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের জন্য উপযুক্ত এবং কৃষক পেঁয়াজ চাষে খুবই আগ্রহী। মূলত রবি মৌসুমে পেঁয়াজের ব্যাপক চাষাবাদ হয়ে থাকে। মসলা গবেষণাকেন্দ্র এবং হর্টিকালচার সেন্টার থেকে রবি মৌসুমের পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের জন্য কৃষকদের বীজ দেওয়া হয়। পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ফলে কৃষক গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এবং এ সময় চাষ করে অনেকে ভালো ফলন পাচ্ছেন।
এদিকে প্রতিবেদনের খসড়ায় সার্বিকভাবে মসলাজাতীয় ফসলের ক্ষেত্রে ৭ ধরনের দুর্বল দিক তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হলো-মসলা সংরক্ষণ বা প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা না থাকা। এছাড়া মসলা ফসলের বীজ, কাটিং বা কন্দ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকা। মসলা ফসলের প্রদর্শনী সংখ্যা কম হওয়া। এ ধরনের ফসল চাষের ওপর কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণের সংখ্যা কম হওয়া। সময়মতো অনেক মসলার বীজের সরবরাহ না থাকা। বীজের পরিমাণ কম হওয়া এবং  এলাকাভিত্তিক মসলা ফসলের প্রদর্শনী এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ না দেওয়া।
আইএমইডি জানায়, ‘মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ’ প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৭ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পরে আদা, সার এবং বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ১৩৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এ বাড়তি ব্যয় অনুমোদন করে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় খরচ হয়েছে ৭৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৫৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এছাড়া এখন পর্যন্ত বাস্তব অগ্রগতি ৬১ শতাংশ। প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, স্থায়ী ও মৌসুমি পতিত জমির পাশাপাশি বসতবাড়ির ফাঁকা জমি চাষের মাধ্যমে ২-৫ শতাংশ খাদ্য নিবিড়তা বৃদ্ধি করা। এছাড়া উৎপাদনব্যবস্থা আধুনিকীকরণের মাধ্যমে মসলাজাতীয় ফসলের ফসল পার্থক্য কমিয়ে আনা। বিদ্যমান শস্য বিন্যাসে টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থাপনা এবং ফসল সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, মসলা ফসলের প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বহুমুখীকরণ। আরও আছে প্রতিকূল পরিবেশে অভিযোজন ক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক প্রযুক্তি ও কৌশল সম্প্রসারনের মাধ্যমে মসলা ফসলের ৫ শতাংশ উৎপাদনশীলতা বাড়ানো হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় আদাচাষ, হলুদ, রসুন, জিরা, কালোজিরা, মরিচ, ক্যাপসিক্যাম, দারুচিনি ও তেজপাতা, মৌরি ও গোলমরিচ, চুঁইঝাল এবং ধনিয়ার চাষ বৃদ্ধির কার্যক্রম চলছে। এছাড়া এলাকাভিত্তিক সুনির্দিষ্ট মসলার চাষ সম্প্রসারণ, কুষ্টিয়া জেলা সদরে একটি মসলা গ্রাম প্রতিষ্ঠা, হর্টিকালচার সেন্টারের অবকাঠামো উন্নয়ন, মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম জোরদারকরণ এবং নৃ-গোষ্ঠীর নারীদের ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *