শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
দক্ষিণ গাজার রাফাহর পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় ত্রাণ সংগ্রহে যাওয়া সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে বর্বর ইসরাইলি বাহিনী। রোববারের এ ঘটনায় প্রায় ৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়টি আরও জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ২৮ জনের মরদেহ খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে এবং ২১ জনের মরদেহ রেড ক্রসের ফিল্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতদের অধিকাংশই ইসরাইলি গুলিবর্ষণে জখম হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এদিন ভোর থেকেই আমেরিকান বেসরকারি সংস্থা ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে প্রচুর মানুষ জড়ো হন। তবে লোকজন যখন ওই কেন্দ্রের কাছাকাছি পৌঁছায়, তখনই ইসরাইলি সামরিক যানবাহন থেকে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এমনকি ড্রোন থেকেও বিস্ফোরক ফেলতে শুরু করে। যার ফলে ব্যাপক হতাহত হয়।
এক চিকিৎসা কর্মকর্তা বলেন, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশের পরিস্থিতি ছিল ‘চরম বিপজ্জনক’। সেখানে উপর্যুপরি গুলিবর্ষণের কারণে অ্যাম্বুলেন্সগুলো আহতদের কাছে পৌঁছাতে পারছিল না। অনেককে ঠেলাগাড়িতে করে সরিয়ে নিতে হয়েছে।
একই সময়ে, গাজার কেন্দ্রস্থলে নেটজারিম করিডোরের কাছে আরেকটি আমেরিকান ত্রাণকেন্দ্রের দিকে আসা সাধারণ মানুষের ওপরও ইসরাইলি সেনারা গুলি চালায় বলে জানান আরও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী।
নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের আল-আউদা হাসপাতালের চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে, বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের কাছে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত একজন ফিলিস্তিনি নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে দখলদার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র অভিচাই আদ্রেয়ি দাবি করেছেন, ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে সেনাবাহিনীর গুলিতে হতাহত হওয়ার কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। তবে ‘ঘটনাটি তদন্তাধীন’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলেছে, ‘ইসরাইল পরিকল্পিত ও নিষ্ঠুরভাবে মানবিক ত্রাণকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। যাতে অনাহারে থাকা বেসামরিকদের ব্ল্যাকমেইল করে তাদের উন্মুক্ত হত্যাযজ্ঞের এলাকায় জড়ো করা যায়’।
এদিকে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরাইল দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় চারটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করার পরিকল্পনা করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম।
তাদের দাবি, মূলত এই পরিকল্পনার মাধ্যমে গাজার উত্তর অংশ থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দক্ষিণে নিয়ে যাওয়া হবে।
ইসরাইলের সেনা রেডিওর ভাষ্য অনুযায়ী, এই ত্রাণ পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হলো গাজার উত্তরাঞ্চলকে ‘সম্পূর্ণভাবে জনশূন্য’ করে ফেলা।
মার্কিন-সমর্থিত এই ত্রাণ পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোরও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।
ইসরাইল গত ২ মার্চ থেকে গাজার সব সীমান্ত পয়েন্ট বন্ধ করে রেখেছে। যার ফলে গাজায় প্রয়োজনীয় খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি ও অন্যান্য সরবরাহ প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। যদিও গত কয়েকদিন ধরে সীমিত পরিমাণে ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরাইল। তবে সাহায্য সংস্থাগুলো গাজার ২৪ লাখ মানুষের মধ্যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
আন্তর্জাতিক অস্ত্রবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে ইসরাইল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্মম সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে। অব্যাহত অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৪,৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন—যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস তাদের মৃতের সংখ্যা ৬১,৭০০-এরও বেশি আপডেট করেছে। জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষ মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামনার সম্মুখীন।