নতুন বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলতে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ- উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ

এম হাফিজুল ইসলাম (হাফিজ):

সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, নতুন বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলতে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। তিনি বলেন, নারী ও শিশুদের নিরাপদ আশ্রয় তৈরির জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই নবযাত্রা আমরা উৎসর্গ করেছি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটকে, উৎসর্গ করেছি ১১ জন নারী শহীদ, শত শত আহত নারী ও শিশু জুলাই যোদ্ধাদের। তিনি বলেন,সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে নারী এবং শিশুর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ করা এবং মেয়েরা যেন এই সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে সেজন্য তাদেরকে সোচ্চার হতে হবে, যেমনিভাবে গত জুলাইয়ে যারা দাঁড়িয়েছিল সাহসের সাথে, প্রতিবাদের সাথে, পরিবর্তনের ডাক নিয়ে। এই কন্যারা কেবল প্রতিবাদী নয়, এরা ভবিষ্যতের নির্মাতা।

দেশে শিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ কেবলমাত্র সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয় উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসে আমরা এই নবযাত্রার সূচনা করতে চাই। আমরা চাই নতুন এক বাংলাদেশ– যেখানে যত্ন থাকবে, সহানুভূতি থাকবে, থাকবে ন্যায়।

তিনি আজ ঢাকায় বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত শিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

কর্মশালায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এনডিসির সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ বেবী বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সচিব ড. মোঃ মহিউদ্দিন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থার প্রতিনিধি, সিভিল সোসাইটির অর্গানাইজেশন প্রতিনিধি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, জুলাইকন্যা, শিক্ষার্থী, স্কাউট, গার্লস গাইড, যুবসমাজ ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী।

উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, আমরা প্রায়শ দেখি: নারী ও শিশুরা পরিবার, কর্মক্ষেত্র, পাবলিক স্পেস, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অনলাইন, সাইবার স্পেসসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নানা ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে সহিংসতার ধরনের ক্ষেত্র ও মাত্রা পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রকৃত অর্থে, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরো বলেন,এলোকেশন অব বিজনেস অনুযায়ী মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অন্যতম কাজ হলো নারী ও শিশুর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে তাদের সুরক্ষা প্রদান করা। এ লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ে মাধ্যমে আরো বেশকিছু নতুন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম হলো- নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক সমন্বিত সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতের জন্য ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত কুইক রেসপন্স টিম গঠন এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে কুইক রেসপন্স টিমের কার্যক্রমকে সোশ্যাল ফোর্সের মাধ্যমে ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিউনিটি লেভেলে সম্প্রসারণ; ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের মাধ্যমে একই স্থান হতে চিকিৎসা সেবা, মনোসামাজিক কাউন্সিলিং সেবা, আইনী সেবা, পুলিশী সহায়তা, লিগ্যালএইড সহায়তা, আশ্রয় সেবা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনঃএকত্রীকরণ এবং ডিএনএ পরীক্ষা সুবিধা প্রদান, ওয়ান- স্টপ ক্রাইসিস সেলের মাধ্যমে সারভাইভারকে রেফারেল সার্ভিস প্রধান, ন্যাশনাল ও রিজিওনাল ট্রমা কাউন্সিলিং সেন্টারের মাধ্যমে মনসামাজিক সেবা প্রদান, ডিএনএ প্রোফাইলিং, টোল ফ্রি ১০৯ হেল্পলাইন, সেইফ সেল্টার হোম স্থাপন, কমিউনিটি হাব স্থাপন, সাইবার ইউনিটের আওতায় সাইবার এক্সপার্ট পুল গঠন, লিগ্যাল ইউনিটের আওতায় লিগ্যাল এক্সপার্ট পুল গঠন, জেন্ডার এক্সপার্ট পুল গঠন, জেন্ডার ক্লাব গঠন, হেল্পলাইন সার্ভিস প্রোভাইডার পুল গঠন, সাইকোসোস্যাল কাউন্সেলিং ও সাইক্রিয়াট্রিস পুল গঠন, নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত ডেলি রিপোর্ট প্রণয়ন ও স্পর্শকাতর ও চাঞ্চল্যকর মামলার ধারাবাহিক ফলোআপ, নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন আইনের যথাযথ প্রয়োগসহ বিভিন্ন কার্যক্রম মন্ত্রণালয়ের অর্গানোগ্রামের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী আমরা স্বপ্ন দেখি এমন এক সহিংসতামুক্ত ও সমতাভিত্তিক নতুন বাংলাদেশের- যেখানে প্রতিটি নারী ও শিশু সুরক্ষিত থাকবে, বেড়ে উঠবে নিরাপত্তা, মর্যাদা, তার প্রাপ্য সকল অধিকার নিয়ে ভালোবাসার আশ্রয় এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা মুক্ত আলোচনা সঞ্চালন করেন এবং উপস্থিত বিভিন্ন মাদ্রাসা, গার্লস গাইড, জুলাইকন্যা, নারী ও শিশু প্রতিনিধিদের কাছে কল্যাণে এই মন্ত্রণালয়ের কি কি করনীয় বিভিন্ন কার্যক্রম, সুপারিশ ও পদক্ষেপ বাস্তবায়নের উপর আলোকপাত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *