শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, তৃণমূলের মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে আমার মন্ত্রণালয় বদ্ধপরিকর । তিনি বলেন, আমাদের যে মানব সম্পদ আছে, মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি সম্ভাবনাময় ভান্ডার। এই সম্ভাবনাময় ভান্ডার কাজে লাগাতে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করছি, আমাদের তরুণ প্রজন্ম জুলাই যোদ্ধাদের ট্রেনাপ করে মানব সম্পদে পরিণত করতে চাই। পুরাতন পদ্ধতিকে মুছে আমরা নতুন কাঠামো গড়ে দিয়ে যেতে চাই সমাজের জন্য।
তিনি আজ ঢাকায় আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মধুমতি মিলনায়তনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে এবং অভ্যুত্থানের সকল শহিদদের স্মরণে ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে সানরাইডার ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন আয়োজিত এবং সমাজসেব অধিদপ্তরের পৃষ্ঠপোষকতায় ওমেন এন্ড গোল্ডেন সিটিজেন ট্রেড ফেস্টিভ্যাল ২০২৫ এর (৪ জুলাই থেকে ৬ জুলাই) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ সাইদুর রহমান খান এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোঃ মহিউদ্দিন, প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য ২৪ জুলাই যুদ্ধে শহিদ মুগ্ধের ভাই মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ এবং জুলাই কন্যা সাবরিনা আফরোজা সেবন্তী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সানরাইডার ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এর চেয়ারপারসন মোঃ মুনীর হোসেন সম্রাট। অনুষ্ঠানে নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পাশাপাশি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তরে বিভিন্ন সোপানের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ২০২৪ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি বছর পার করে আজ আমরা ৪ জুলাই ২০২৫ দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছি। আপনারা একটু ভেবে দেখেন ৪ জুলাই ২০২৪ সেদিন কি ঘটেছিল, কোথায় ছিলাম আমরা। সেদিন পায়ের নিচের মাটি কেঁপে উঠেছিল, আপনাদের অনেকের সন্তান সেদিন জুলাই আন্দোলনের মাঠে ছিল, কি অস্থিরতা ছিল সেদিন, তাদের আটকানো যায়নি। তিনি কারণ উল্লেখ করে বলেন, গত ১৫টি বছর দেশে অন্যায়ের পাহাড় গড়ে উঠেছিল, যে পাহাড় ভাঙার জন্য জুলাই যুদ্ধের সৃষ্টি এসেছিল। সেদিন আমাদের সন্তানরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। অন্যায়কে রুখে দিয়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলো।
তিনি বলেন, আমাদের সন্তানরা কুটিল রাজনীতি বোঝেনা। তারা ন্যায্যতার জন্য লড়াই করেছে। অন্যায় করলে আগামীতেও তারা রুখে দাঁড়াবে, এটাই তারুণ্য।
তিনি আরো বলেন, আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি না, আমরা যদি আমাদের মননে, মানসিকতায় অন্যায় ধারণ করি, যদি আমাদের অপরাধবোধ কাজ না করে তবে অনায়াসে বলতে পারি এমন হলে, জুলাই যোদ্ধারা ফিরে ফিরে আসবে। ১৯৪৭ সালের পর থেকে প্রতি একযুগে একবার আমাদের ন্যায্যতার জন্য লড়াই করতে হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, জুলাই যুদ্ধে সকল শহিদকে এখনো চিহ্নিত করা যায়নি, তবে আমরা কাজ করছি তাদের কাছে আমরা পৌঁছাবো।
তিনি বলেন, এ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর যে কাঠামোগত ত্রুটি ছিল তা চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয়ের কাঠাম পরিবর্তন করে প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের কাছে ভাতা পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের সেবার আওতায় আনার চেষ্টা করছি।
তিনি আরো বলেন ,ন্যায় ও সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠায় সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করতে হবে, আমরা কর্মক্ষেত্রে যাতে নতুন মূল্যবোধের সূচনা করতে পারি, সকলে মিলে এগিয়ে যেতে হবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উপদেষ্টা অনুষ্ঠানে হুইলচেয়ারে আরোহিত প্রতিবন্ধীদের ফ্যাশন শো এবং শিশু প্রতিবন্ধীদের দলীয় নিত্য পরিবেশন উপভোগ করেন। এর আগে উপদেষ্টা বেলুন উড়িয়ে এ ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন করেন এবং রকমারি পণ্য সজ্জিত ৩০ টির অধিক স্টল পরিদর্শন করেন। এ ফেস্টিভ্যালে শিশুদের চিত্রাংকন ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে । সেই সাথে প্রতিদিন নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়ন বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
বিকেলে উপদেষ্টা গাজীপুরেরর টঙ্গী এরশাদ নগরে জুলাই যুদ্ধে শহিদ নাফিসা হোসেন, শহিদ সানজিদা হোসেন এর পরিবারের সাথে দেখা করেন। পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দেন এবং মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। উপদেষ্টা তাদের কবর জিয়ারত করেন। উত্তরায় শহিদ নাঈমা সুলতানার পরিবারের সাথে দেখা করেন এবং নাইমা সুলতানা যেখানে গুলিবিদ্ধ হন সেই স্থান পরিদর্শন করেন। তিনি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে নাইমা সুলতানার মা’কে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।