শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, সাদাছড়ি একটি শক্তি। এটা স্বাধীনতার প্রতীক, সচেতনতার প্রতীক এবং এটা সীমাবদ্ধতা প্রকাশ করে না, সীমাহীনতা প্রকাশ করে। তিনি বলেন, অন্ধত্ব কোনো হেরে যাওয়া অবস্থা নয়, অন্ধত্ব হলো একটি অন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সীমিত সময়ের মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্তৃক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়ন ও তাদের স্বার্থ সুরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আজ ঢাকায় মিরপুর জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের সম্মাননা ও প্রণোদনা প্রদান, সাদাছড়ি বিতরণ এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ এর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ, সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভলপমেন্ট এর সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর মোঃ জাহাঙ্গির আলম, ভিজ্যুয়ালী ইম্পেয়ার্ড পিপলস সোসাইটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ মোশাররফ হোসেন মজুমদার, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী সহযোগিতা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ড. মোঃ হারুন উর রশিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মোহিনী আক্তার তামিম এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আলী হোসেন প্রমূখ।
উপদেষ্টা বলেন, আজকের এই দিবসটির রয়েছে বর্ণাঢ্য ইতিহাস। সর্বপ্রথম ১৯৬৪ সনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস উদযাপিত হয়। ১৯৬৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রথম বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে প্রতিবছর সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘সাদাছড়ির আধুনিকায়ন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়ন’ ।
এ প্রতিপাদ্যটি যথার্থ ও সময়োপযোগী উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস উদযাপন শুধুমাত্র সাদাছড়ি বিষয়ক একটি বৈশ্বিক উদযাপন নয় বরং এটি বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সংহতি, একাত্মকতা ও অধিকারের প্রতীক। বর্তমান বাংলাদেশ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের অংশগ্রহণে এক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে বদ্ধপরিকর। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা এদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ বিভিন্ন শ্রেণীর প্রতিবন্ধী জনগণকে উপযুক্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে তাদেরকে উন্নয়নের
মূলস্রোতধারায় সম্পৃক্ত করে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত , সুখী-সমৃদ্ধ, উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ব সাদাছড়ি নিরাপত্তা দিবস ২০২৫ উদযাপনের মাধ্যমে এ দেশের সকল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের পথ আরো প্রসারিত হবে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য:
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্তৃক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রী/ব্যক্তিদের মধ্যে সাধারণ সাদাছড়ির পাশাপাশি আধুনিক ইলেকট্রনিক সেন্সরযুক্ত “স্মার্ট ক্যান” বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। উক্ত স্মার্ট ক্যান ব্যবহার করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীগণ আরও স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করে লেখাপড়া সম্পন্ন করতে পারছেন এবং অনেকে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এ বছরও দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্তৃক ১০০ জন মেধাবী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীর প্রত্যেককে ৫০০০/- টাকা করে আর্থিক অনুদান/সম্মাননা প্রদানসহ বিনামূল্যে বিভিন্ন বয়সের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি/সংশ্লিষ্ট সংগঠনের মধ্যেও “স্মার্ট ক্যান” ও সাধারণ সাদাছড়ি বিতরণ করা হয়।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্তৃক এদেশের প্রতিবন্ধী জনগণের সার্বিক কল্যাণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিনামূল্যে থেরাপিউটিক ও রেফারেল সেবা প্রদানের জন্য দেশের সকল জেলা সদরসহ ৩৯টি উপজেলা/থানা পর্যায় ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। এ সকল সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকল প্রকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তি/প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিগণকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ফাউন্ডেশন ক্যাম্পাসে একটি কর্মজীবী প্রতিবন্ধী মহিলা ও পুরুষ হোস্টেল রয়েছে। উক্ত হোস্টেলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ (মহিলা ও পুরুষ) অবস্থান করে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়া, ৪৫টি মোবাইল থেরাপি ভ্যানের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকায় ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। আরও 20টি উপজেলা/থানায় নতুন করে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণসহ সকল ধরণের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণের থেরাপিউটিক চিকিৎসা প্রাপ্তির সুবিধা আরও সম্প্রসারিত হবে।
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠির শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান, পুনর্বাসনের জন্য ব্যক্তিগত অনুদান, প্রতিবন্ধী জনগণের উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বেসরকারি এনজিওদের মধ্যে অনুদান বিতরণ, সহায়ক উপকরণ প্রদান, কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন, কর্মজীবী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের হোস্টেল সুবিধা প্রদান, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ সকল কার্যক্রমের মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ অন্যান্য শ্রেণীর প্রতিবন্ধী জনগণ উপকৃত হচ্ছেন। এছাড়া প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের জন্য জাতীয় সংসদ ভবনের পশ্চিম পার্শ্বে ৪.১৬ একর জমিতে শহীদ ফারহান ফাইয়াজ খেলার মাঠে প্রতিবন্ধী শিশু/কিশোরদের জন্য খেলাধুলার আয়োজন করে কর্মমুখর রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং ঢাকা জেলাধীন সাভার উপজেলায় রামচন্দ্রপুর মৌজার ১২.০১ একর জমিতে ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সকল শ্রেণীর প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রীড়া নৈপুন্য প্রদর্শনের পথ আরও সম্প্রসারিত হবে।
সামাজিক সুরক্ষা, ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তথা সকল প্রকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণের জীবন মান উন্নয়নে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থা অনেকগুলো কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। তন্মধ্যে সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় পরিচালিত প্রতিবন্ধী ভাতা, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি, প্রতিবন্ধিতা সনাক্তকরণ জরীপ কর্মসূচী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় পরিচালনা, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ ও সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন ইত্যাদি কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য। প্রতিবন্ধিতা সনাক্তকরণ জরিপমতে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৪,৮৭,৮১৮ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে সনাক্ত করা হয়েছে। জরিপ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
দুপুরে উপদেষ্টা রাজধানীর মিরপুরে রুপনগরে রাসায়নিক গুদাম ও পোশাক কারখানায় গতকালের অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের সাথে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আপনারা জানেন এই ধরনের দুর্ঘটনা জনবহুল এলাকা পুরোনো ঢাকায় ইতোপূর্বে ঘটেছে। এ ধরনের জনবহুল এলাকায় রাসায়নিক গুদাম অনাকাঙ্ক্ষিত। এই ধরনের গুদাম ও প্রতিষ্ঠান গ্রহণযোগ্য নয় । এ ব্যাপারে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। গুদাম আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে তবে কেমিক্যাল থাকায় ভিতর এখনো কাজ চলছে। আগুনে নিহতদের বিষয়ে তিনি বলেন, সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেছি এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক এবং দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি আহতদের যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তাদের সুচিকিৎসায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হাসপাতাল সমাজকর্মীগণ কাজ করছেন এবং তাদের পরিবার পরিজনদের সাথে সর্বক্ষণের খোঁজ খবর রাখছেন।