রিশাদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে জয় দিয়ে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

স্পিনার রিশাদ হোসেনে দুর্দান্ত বোলিংয়ে জয় দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ। আজ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ৭৪ রানে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ৩৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন রিশাদ।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামে স্বাগতিক বাংলাদেশ। দলীয় ৮ রানেই দুই ওপেনারকে হারায় টাইগাররা। দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসার রোমারিও শেফার্ডের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন সাইফ হাসান। ৬ বলে ৩ রান করেন তিনি।
পরের ওভারের প্রথম ডেলিভারিতে সাজঘরের পথ ধরেন সৌম্য। ক্যারিবীয় পেসার জেইডেন সিলেসের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে রোস্টন চেজকে ক্যাচ দিয়ে ৪ রানে আউট হন দুই সিরিজ পর দলে ফেরা সৌম্য।
তিন বলের ব্যবধানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে ইনিংসের শুরুতেই চাপে পড়ে বাংলাদেশ। দলকে চাপমুক্ত করতে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন ক্রিজে আসা দুই নতুন ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। তাদের সাবধানী ব্যাটিংয়ে ১৭তম ওভারে হাফ-সেঞ্চুরি পায় বাংলাদেশ। কিছুক্ষণ পর জুটিতেও হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শান্ত ও হৃদয়।
২৩তম ওভারের শুরুতে শান্ত ও হৃদয়ের জুটিতে ভাঙন ধরান ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার খারি পেরি। ৩টি চারে ৬৩ বলে ৩২ রান করে পেরির বলে লেগ বিফোর হন শান্ত।
হৃদয়ের সাথে ১২০ বলে ৭১ রানের জুটি গড়েন তিনি।
দলীয় ৭৯ রানে শান্তর বিদায়ে ক্রিজে আসেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। হৃদয়ের সাথে ৭৫ বলে ৩৬ রানের জুটিতে বাংলাদেশের রান ১শ পার করেন মাহিদুল। এই জুটিতে ৮৭ বলে ওয়ানডেতে ১১তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন হৃদয়।
অর্ধশতকের পর ইনিংস বড় করতে পারেননি হৃদয়। পেসার জাস্টিন গ্রেভসের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। ৩ বাউন্ডারিতে ৯০ বলে ৫১ রান করেন হৃদয়।
এরপর অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশের রানের গতি বাড়ান মাহিদুল। তাদের ৫৫ বলে ৪৩ রানের জুটিতে ৪২তম ওভারে দেড়শ পায় টাইগাররা।
এই জুটিতে ২টি চারে ২৭ বলে ১৭ রান অবদান রেখে স্পিনার চেজের বলে সুইপ করে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারে গ্রেভসকে ক্যাচ দেন মিরাজ।
হাফ-সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও ৪ রান দূরে থাকতে চেজের দ্বিতীয় শিকার হন মাহিদুল। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি। ৩টি চার মেরে ৭৬ বলে ৪৬ রান করেন মাহিদুল।
দলীয় ১৬৫ রানে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে মাহিদুল ফেরার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের উপর চড়াও হন রিশাদ হোসেন। তার ২টি ছক্কা ও ১টি চারে সাজানো ১৩ বলে ২৬ রানের সুবাদে ২শর কাছে পৌঁছে যায় বাংলাদেশের স্কোর। কিন্তু ২শ থেকে ২ রান দূরে থাকতে অষ্টম ও নবম ব্যাটার হিসেবে রিশাদ ও তাসকিন আহমেদ আউট হলে ২শর আগেই অলআউট হবার শঙ্কায় পড়ে টাইগাররা।
শেষ উইকেটে ৫ বলে ৯ রান যোগ করে দলের রান ২শ পার করেন তানভীর ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমান।
শেষ ব্যাটার হিসেবে ফিজ রান আউট হলে ইনিংসের ২ বল বাকী থাকতে ২০৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এই নিয়ে টানা ৭ ইনিংসে ৫০ ওভারও ব্যাট করতে পারল না টাইগাররা।
সিলেস ৪৮ রানে ৩টি, চেজ ও গ্রেভস ২টি করে উইকেট নেন।
২০৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দারুণ শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। উদ্বোধনী জুটিতে ৭২ বলে ৫১ রান তুলেন ক্যারিবীয় দুই ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং ও অ্যালিক আথানাজে।
১২তম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমণে এসে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন রিশাদ। ৩৬ বলে ২৭ রান করা আথানাজেকে লেগ বিফোর আউট করেন তিনি।
এরপর নিজের পঞ্চম ওভারে তিন নম্বরে নামা কেসি কার্টিকে ৯ রানে শিকার করেন রিশাদ। নিজের ষষ্ঠ ওভারে আরও ২ উইকেট শিকার করেন তিনি। কিংকে ৪৪ রানে এবং রাদারফোর্ডকে খালি হাতে বিদায় দেন তিনি। নিজের সপ্তম ওভারে পঞ্চমবারের মত উইকেট শিকারে মাতেন ক্যারিয়ারের ১২তম ওয়ানডে খেলতে নামা রিশাদ। চেজকে ৬ রানে বিদায় দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মত ইনিংসে ৫ উইকেটের দেখা পান তিনি।
রিশাদের ঘূর্ণিতে পড়ে ৯২ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ক্যারিবীয়রা। ৩৯ ওভারে ১৩৩ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা।
৯ ওভারে ৩৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের বড় অবদান রাখেন রিশাদ। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের চতুর্থ বোলার হিসেবে ইনিংসে ৬ উইকেট নিলেন তিনি।
এছাড়া ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে তৃতীয় সেরা বোলিং ফিগারের নজির গড়েন রিশাদ।
সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে আগামী ২১ অক্টোবর একই ভেন্যুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামবে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ :-
২০৭/১০, ৪৯.৪ ওভার (হৃদয় ৫১, মাহিদুল ৪৬, সিলেস ৩/৪৮)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ :-
১৩৩/১০, ৩৯ ওভার (কিং ৪৪, আথানাজে ২৭, রিশাদ ৬/৩৫)।

ফল : বাংলাদেশ ৭৪ রানে জয়ী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *