শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের নারীসমাজ, কারণ লবণাক্ততা বৃদ্ধি, পানি সংকট, ভূমি ক্ষয় এবং খাদ্য অনিরাপত্তা সরাসরি তাদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই পরিস্থিতিতে নারীরাই সবচেয়ে দ্রুত অভিযোজনমূলক উদ্যোগ নিয়েছেন— যেমন লবণাক্ততা পরিমাপ, লবণসহিষ্ণু খাদ্যপণ্য সংরক্ষণ, পরিবেশবান্ধব উপকরণ তৈরি এবং পরিবারের আয় টিকিয়ে রাখতে বিকল্প আয়ের পথ সৃষ্টি।
বক্তব্যে তিনি বলেন, “নারী উদ্যোক্তারা যখন শক্তিশালী হন, তখন অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বাড়ে, শিশুদের শিক্ষা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত হয়।” তিনি নারীর শক্তিকে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার অন্যতম চালিকা শক্তি হিসেবে তুলে ধরেন।
আজ রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত “Voices for Change: Putting Climate Action, Women Entrepreneurs, and SMEs in Bangladesh’s Public Policy” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, নারী উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রূপান্তর, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্থানীয় আঞ্চলিক উন্নয়নের প্রধান শক্তি। উপদেষ্টা বলেন, “নারী যখন স্বাবলম্বী হন, তখন একটি পরিবার, একটি সমাজ এবং শেষ পর্যন্ত একটি জাতি এগিয়ে যায়।” দেশের প্রতিটি অঞ্চলে, বিশেষত গ্রামীণ এলাকায়, নারী উদ্যোক্তারা বিভিন্ন সামাজিক বাধা, সীমাবদ্ধতা ও আর্থিক সংকট মোকাবিলা করেও নিজস্ব পণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং মূল্য সংযোজনমূলক কাজে যুক্ত হচ্ছেন— যা জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে।
তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বাড়াতে বাজারে প্রবেশাধিকার, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, আর্থিক সহায়তা এবং নীতিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম স্থানীয় পণ্যের পরিচিতি, বিপণন এবং গ্রাহক গঠনে বড় ভূমিকা রাখছে। অনেক নারী উদ্যোগী ঘরে বসেই হস্তশিল্প, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যপণ্য, পোশাক, প্রসাধনী এবং স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী পণ্য উৎপাদন করে সফলতা অর্জন করছেন।
তিনি বলেন, জামদানি, নকশীকাঁথা, মাটির সামগ্রী, স্থানীয় খাদ্যপণ্যের মতো ঐতিহ্যকে ব্র্যান্ডিং করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় করা সম্ভব, এবং এতে নারী নেতৃত্ব সবচেয়ে সম্ভাবনাময়। তিনি নারী উদ্যোক্তাদের নীতি সহায়তা, বাজার সম্প্রসারণ, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, মূল্যগত ন্যায্যতা ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, “নারী ও তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রধান চালিকা শক্তি। রাষ্ট্রীয় কাঠামো, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সমাজ— সবাইকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।”
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন—আব্দুন নাসের খান, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল পিএলসি (বিএসসিপিএলসি); সারা হোসেন, সিনিয়র অ্যাডভোকেট, সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ; বিপাশা এস. হোসেন, কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ, আইইউসিএন বাংলাদেশ; শেখ মোহাম্মদ মেহেদী আহসান, মহাসচিব, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি); তাজিমা মজুমদার, ভাইস প্রেসিডেন্ট–০১, উইমেন এন্ট্রাপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (উইএবি) এবং নাসরিন ফাতেমা আওয়াল, প্রেসিডেন্ট, উইএবি।
এর পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘International Conference on Water Security and Climate Change: Local Knowledge and Global Future’-এ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে, উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বাড়ছে এবং নিরাপদ পানির সংকটে সবচেয়ে বেশি ভুগছে নারী ও শিশু। তিনি বলেন, সরকার বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে এবং পাঁচটি বিভাগে নদী রক্ষায় জরুরি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জলনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।