শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিদ্যমান সীমান্ত সমস্যা সমাধানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-কে সর্বোচ্চ কৌশল, পেশাদারিত্ব ও যোগ্যতার পরিচয় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।
উপদেষ্টা আজ সকালে রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের শহিদ শাকিল আহমেদ হলে বিজিবি দিবস–২০২৫ ও পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ নির্দেশনা প্রদান করেন।
উপদেষ্টা বলেন, সীমান্ত সমস্যা সমাধানে দেশের স্বার্থ শতভাগ রক্ষা করতে হবে। জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রেখে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় অত্যন্ত ন্যায়ানুগ পন্থায় নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, বিজিবি এক সুদীর্ঘ ও গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। আজকের বিজিবি এক ‘ত্রিমাত্রিক’ বাহিনী হিসেবে দেশের সীমান্ত সুরক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা ও জনকল্যাণমূলক কাজে অনন্য ভূমিকা রাখছে। বিজিবি’র উন্নয়নে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। উপদেষ্টা বলেন, বিজিবি সদস্যদের তিনটি বিষয়ে সর্বাগ্রে মনোযোগ ও গুরুত্ব দিতে হবে: ডিসিপ্লিন, ট্রেনিং ও ওয়েলফেয়ার। তিনি বলেন, অধীনস্থ কমান্ড/ট্রুপসদের কল্যাণে সর্বদা খেয়াল রাখাসহ সজাগ এবং সতর্ক থাকতে হবে।
বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা বলেন, সীমান্ত দিয়ে কোন মাদক প্রবেশ করতে পারবে না। স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত সতর্কতা আনয়ন করতে হবে। তিনি বলেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে বিজিবি’র চক্ষু ফাঁকি দিয়ে দেশীয় কোন পণ্য বিদেশে পাচার হবে না। তিনি আরো বলেন, যে সকল কর্মকর্তা/কর্মচারি চোরাকারবারী ও মাদক পাচারকারীদের সহায়তা করে কিংবা সাহায্য করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। উপদেষ্টা বলেন, চোরাকারবারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে জেলা প্রশাসনের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর হয়, সে বিষয়ে বিজিবি’র বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। তিনি এ বিষয়ে বিজিবি’কে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর নির্দেশ দেন। তিনি বলেন,বাংলাদেশ থেকে যাতে কোনো অপরাধী, সন্ত্রাসী সীমান্ত দিয়ে পলায়ন করতে না পারে সে বিষয়ে বিজিবি’কে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। উপদেষ্টা বিজিবি সদস্যদের ‘চেইন অব কমান্ড’-এর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও আনুগত্য বজায় রাখার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে সীমান্ত রক্ষার পবিত্র দায়িত্বের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার যে কোনো দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে পালন করার আহ্বান জানান।
পরে উপদেষ্টা বিজিবি’তে কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদকপ্রাপ্তদের পদক পরিয়ে দেন। এবছর ১২ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক (বিজিবিএম), ২৪ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক (পিবিজিএম), ১২ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক-সেবা (বিজিবিএমএস) এবং ২৪ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক-সেবা (পিবিজিএমএস) সহ সর্বমোট ৭২ জনকে বিভিন্ন পদকে ভূষিত করা হয়।
পদক প্রদান শেষে উপদেষ্টা বিজিবির খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারবর্গের জন্য আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি পরিবারসমূহকে বিজিবি’র পক্ষ থেকে উপহার সামগ্রী প্রদান করেন এবং ভবিষ্যতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারবর্গের পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।
এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি এবং বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।