পঞ্চম অধ্যায়
ঈমান নষ্টকারী কার্য সমূহের বিবরণ
মুসলমানের মূলধন ঈমান। আর মূল মন্ত্র হলো কলেমাতুত তাকওয়া- “লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)।” কোন কারণে যদি এই ঈমান নষ্ট হয়ে যায়, তবে দ্বীন ও দুনিয়াতে আর কিছুই থাকল না। তাই অত্যন্ত হুশিয়ারীর সাথে ঈমান নষ্টকারী বিষয়গুলো ভালভাবে জেনে, বুঝে, চিন্তা ভাবনার মাধ্যমে, তা থেকে দূরে থাকার পন্থা নির্ধারণ করতে হবে। জীবনের প্রতিটি কাজ এবং এবাদতের প্রতিটি শাখার প্রতিও নজর রাখতে হবে যেন ঈমান রূপ রাস্তা থেকে নিজের অলক্ষ্যে দূরে সরে না পরে।
অনেক সময় দেখা যায়, জ্ঞানের অভাবে সে বে’দাত কাজকে ঈমানের অংশ মনে করে সারা জীবন ছওয়াবের আশায় উৎসাহ ভরে করে যাচেছ। ভুল আমলের জন্য আল্লাহর বান্দা ও রাসুলের উম্মত হতে নাম খারিজ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত ভাবে নামাজ পড়ছে, রোজা রাখছে, কোরআন তেলোয়াত করছে, জিকির আজকার করছে, হজ্জ করছে, যাকাত ও দান খয়রাত করছে। অথচ এসব এবাদতের একটিও আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য হবে না। অর্থাৎ তার সারা জীবন ভুলের মধ্যে শেষ হয়ে গেলো। হায়, কি দুর্ভাগ্যের কথা!
“বেগায়ের মুসলমানছে কুই এবাদত কবুল নেহি হুতী।”
আল্লাহ পাকের দরবারে বান্দার এবাদত কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহ পাক যে সকল শর্ত আরোপ করেছেন, শেরেক বা কুফরী করার পর তার কোন এবাদত আল্লাহর দরবারে এবাদত বলে গণ্য হবে না। তাই কেউ যদি ভুল বশতঃ শেরেক করেই ফেলে তবে তাকে নিজের অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর আযাবের ভয়ে চোখের পানিতে বক্ষ পাব্লিত করে দয়াময় আল্লাহর শাহী দরবারে আজিজি এনকেছারির সাথে লজ্জিত মনে দু’হাত তুলে ক্ষমা চাইতে হবে। খালেছ অন্তরে তওবা করতে হবে, ফরিয়াদ করতে হবে।
আয় মাবুদ! আমি বুঝতে না পেরে, শয়তানের ধোঁকায় পরে ভুল করেছি, নাফরমানি করেছি। তা থেকে মুক্তির জন্য তোমার দরবারে দু’হাত তুলে প্রার্থনা করছি- নিশ্চয় তুমি অত্যন্ত দয়ালু ও ক্ষমাশীল, ক্ষমাকেই তুমি পছন্দ কর। আমি এরূপ কাজ আর কখনও করবো না। আমার প্রতি রহম কর! আমি তোমারই হাবীবের উম্মত- তাঁর উছিলায় আমাকে ক্ষমা কর এবং আমাকে তোমার হাবীবের দ্বীনের উপর কবুল কর।
কলেমায়ে তৌহিদ- “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।”
কলেমায়ে শাহাদাত-
“আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারিকালাহু অ-আশহাদু আন্না মোহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।”
ইয়া আল্লাহ! ইয়া রাহমানুর রাহিম! আমাকে আমার প্রতিজ্ঞা বা ওয়াদার উপর প্রতিষ্ঠিত কর এবং কায়েম রাখ।
আল্লাহর হাবীব বলেছেন-
“গায়রুল্লাহর নামে কেউ শপথ করলে কাফের বা মুরশীক হয়ে যাবে।” (তিরমিজি শরীফ)
মুসলমান ব্যক্তি যদি কোন প্রকার কুফরী বা শেরেকী না করে তবে সে যত গুনাহের বোঝা নিয়েই মৃত্যু মুখে পতিত হোক না কনে, সে একটা নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত দোজখে শাস্তি ভোগ করার পর আল্লাহর মেহেরবাণীতে নবী (সাঃ)- এর শাফায়াত লাভ করে বেহেশতে যাবে। কিন্তু কাফের এবং মোশরীকগণ অনন্তকাল দোজখের কঠিন আযাবে জ্বলতে থাকবে। কোনদিন মুক্তি পাবে না।
তাই কিসে শেরেকী হয়, কিসে কুফরী হয় এ বিষয়গুলি ভালভাবে জানা থাকা দরকার। নচেৎ ঈমান নিয়ে দুনিয়া হতে বিধায় নেয়া খুব কষ্টদায়ক হয়ে যাবে। যার ঈমান ও অকিদায় বিন্দু মাত্র শেরেকী ও কুফরী থাকবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে, চির জাহান্নামী হবে।