সিরিয়াকে নিয়ে যে ‘ভয়ঙ্কর খেলা’ খেলছে ইসরাইল

শুভদিন অরলাইন রিপোর্টার:

বাশার আল আসাদের পদচ্যুতির পর যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় একটা স্থিতিশীলতা ও গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমদ আল শারা (জোলানি)। তবে এরই মধ্যে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরাইল।
বিশেষ করে সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট আল-শারার বাসস্থানের (প্রেসিডেন্ট প্যালেস) কাছাকাছি ইসরাইলি বাহিনীর নজিরবিহীন হামলার পর সিরিয়ার বিরুদ্ধে ইসরাইলের এক বিপজ্জনক পরিকল্পনার তথ্য প্রকাশ করেছে লেবাননের একটি পত্রিকা।
আঞ্চলিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়াকে ঘিরে বহু ধাপের একটি বিপজ্জনক প্রকল্প শুরু হয়।
ইসরাইলের এই অশুভ পরিকল্পনাটি একাধিক ধাপে বাস্তবায়িত হচ্ছে। যার প্রথম ধাপে একটি গোয়েন্দা-সামরিক-রাজনৈতিক প্রকল্পের মাধ্যমে ও যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইলি সরকার ও তুরস্কের সমন্বয়ে বাশার আল-আসাদের সরকার পতনের মাধ্যমে এর সূচনা ঘটে।
এরপর তা সিরিয়ার উপকূলবর্তী (আলাওয়ি অধ্যুষিত) অঞ্চলে গণহত্যায় রূপ নেয়। তারও আগে পূর্ব সিরিয়ায় কুর্দি মিলিশিয়াদের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে। এমনটাই জানিয়েছে লেবাননের সংবাদমাধ্যম আল-বিনা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ইসলামের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে অপমানের অজুহাতে দ্রুজ অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেও হামলা চালানো হয়েছে। তবে এই ঘটনাগুলোর সবই সিরিয়ায় বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর বৃহৎ প্রকল্পের অংশ। যা দেশটির অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং সিরিয়ায় রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বিস্তারকারী আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এই অশুভ পরিকল্পনার চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো- সিরিয়াকে খণ্ড-বিখণ্ড করা এবং একাধিক স্বতন্ত্র সত্তা ও শাসনব্যবস্থায় বিভক্ত করে দেশটিকে একেবারেই দুর্বল করে তোলা। যাতে খুব সহজেই বিদেশি নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দেওয়া যায়।
এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো সতর্ক করে বলেছে, সিরিয়াকে গৃহযুদ্ধ ও বিভাজনের দিকে ঠেলে দেওয়া হলে এর ভয়াবহ সামরিক, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক প্রভাব পড়বে পুরো মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের ওপর। বিশেষ করে লেবানন, ফিলিস্তিন, জর্ডান ও ইরাকে।
এদিকে শনিবার দামেস্কের উত্তরে হামার উপকণ্ঠে ইহুদিবাদী ইসরাইলের নতুন বিমান আগ্রাসনের খবর দিয়েছে সিরিয়ার স্থানীয় গণমাধ্যম।
স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে প্রেস টিভি জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী সিরিয়ায় হামার গ্রামাঞ্চল লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে।
সিরীয় সূত্রটি আরও জানিয়েছে, মার্কিন যুদ্ধবিমান ও ড্রোন দক্ষিণ সিরিয়ার দারা প্রদেশের উপর দিয়ে উড়ছে।
সুওয়েদার স্থানীয় গণমাধ্যমও জানিয়েছে, দক্ষিণ প্রদেশের উপর দিয়ে উড়ে আসা ইসরাইলি হেলিকপ্টারগুলো প্যারাসুট অভিযান পরিচালনা করছে।
অন্যদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে দক্ষিণ সিরিয়ায় তার সৈন্য মোতায়েন এবং এইচটিএস-শাসনকে দ্রুজ-অধ্যুষিত এলাকায় প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ার জন্য তাদের প্রস্তুতি ঘোষণা করেছে।
ইতোমধ্যেই দখলদার ইসরাইলি সেনাবাহিনী যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি ঘোষণা করেছে এবং সিরিয়ান দ্রুজ সম্প্রদায়ের পাঁচজনকে দখলকৃত অঞ্চলে চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের কথা উল্লেখ করেছে।
দখলদার সরকারের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সিরিয়ায় আহত পাঁচজন দ্রুজিকে অধিকৃত অঞ্চলের সাফেদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, শুক্রবার সিরিয়াজুড়ে ইসরাইলি সরকার ২০টি বিমান হামলা চালিয়েছে।
এর আগে শুক্রবার সিরীয় প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছাকাছি একটি জায়গায় সতর্কীকরণ হামলার পর ইসরাইল শনিবার এ হামলা চালিয়েছে।
এদিকে ইসরাইল সিরিয়ার দ্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্য হামলাগুলো চালিয়েছে বলে দাবি করলেও, দ্রুজরা ইসরাইলি সরকারের যে কোনো হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছে। সূত্র: মেহের নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *