শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আশুলিয়ায় ৬ ছাত্র-জনতা হত্যার পর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় সাভারের সাবেক এমপি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গত ১৯শে জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে এ তথ্য জানান প্রসিকিউটর মো. সাইমুম রেজা তালুকদার। এদিন আশুলিয়ায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আনুষ্ঠানিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে আরও এক সপ্তাহ সময় আবেদন করেন প্রসিকিউশন। পরে ট্রাইব্যুনাল সময় আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২রা জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেন।
এদিকে, জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক হাসিনা ও আসাদ্দুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আগামী ১লা জুলাই দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়াও গুম সংক্রান্ত মামলায় ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান সহ ১১ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৪শে আগস্ট দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। শুনানিতে প্রসিকিউটর মো. সাইমুম রেজা তালুকদার ট্রাইব্যুনালকে বলেন, আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৭ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৩ জন এখনো পলাতক রয়েছেন। এ ছাড়াও তদন্ত প্রতিবেদনে আরও ৫ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে- রনি ভূঁইয়া, মো. মাসুদুর রহমান, নির্মল কুমার দাস, সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং মো. আসাদুজ্জামান রিপন। যাদের বিরুদ্ধে মাননীয় ট্রাইব্যুনাল এখনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেনি। এমতাবস্থায়, আসামিদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিলের জন্য আরও ১ সপ্তাহের সময় চায় প্রসিকিউশন। পরে সময় আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২রা জুলাই দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-১। মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন- সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উত্তরের সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক আবদুল মালেক, সাবেক উপ-পরিদর্শক আরাফাত উদ্দীন, সাবেক উপ-পরিদর্শক শেখ আফজালুল হক, সাবেক উপ-পরিদর্শক কামরুল হাসান ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার। এ ছাড়াও পলাতক আসামিরা হলেন- সাভারের সাবেক এমপি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আশুলিয়া থানার সাবেক ওসি এ এফ এম সায়েদ ও সাবেক উপ-পরিদর্শক বিশ্বজিৎ সাহা।
এদিকে, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার পলাতক আসামি শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও গ্রেপ্তারকৃত সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানি আগামী ১লা জুলাই দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১। সেই সঙ্গে পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ঠিক করার আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ শাসনামলের দীর্ঘ ১৫ বছরে সংঘটিত গুম, খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আগামী ২৪শে আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলার ১১ জন আসামির মধ্যে ৪ জনের নাম প্রকাশ করেছে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। তারা হলেন- শেখ হাসিনা ও তার সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ। এ ছাড়াও এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি এনটিএমসি সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান শুনানির সময় ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন।
শুনানি শেষে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, পলাতক শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী তা করা হয়েছে। আজকে ট্রাইব্যুনালকে জানানো হয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তি মামলার নথিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এখন তাদের জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ দিবেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১লা জুন আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের উপর শুনানি হবে। আশুলিয়ার মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি। এখানে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আমরা আশা করছি- নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ফর্মাল চার্জ দাখিল করতে পারবো।
এসময় শেখ হাসিনার আইনজীবী নিয়োগ প্রসঙ্গে চিফ প্রসিকিউটরের উপদেষ্টা টবি ক্যাডম্যান বলেন, স্টেট ডিফেন্স নিয়োগের জন্য ট্রাইব্যুনালের আইনেই বলে দেয়া আছে। শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ প্রসিকিউশনের এখতিয়ার নয়। এটি ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের বিষয়। বিচারপতিরাই সিদ্ধান্ত নিবেন যে কাকে এখানে নিয়োগ করা হবে। যদি কোনো অভিযুক্ত আসামি তার বিরুদ্ধে দেয়া রাষ্ট্রনিযুক্ত আসামিকে না পছন্দ করেন, তাহলে সেটিও বিচারকদের কাছে তুলে ধরতে হবে। এখানে ২টি বিষয় উল্লেখ করতে হবে। একটি হচ্ছে- যদি কোনো আসামি রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীকে রিফিউজড করে, আসামির ইন্টারেস্ট ধরে রাখতে পারবে না বলে মনে করেন। আরেকটি হচ্ছে নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিতের জন্য ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করবেন। এখানে প্রসিকিউশনের কিছু করার নেই। এমনকি এই আইনজীবী নিয়োগে প্রসিকিউশনের কোনো ভূমিকা রাখাই উচিত নয়।