শপথ নিলেন নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

নেপালের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি সোমবার তাঁর  মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করেছেন। তরুণদের নেতৃত্বাধীন দুর্নীতিবিরোধী প্রাণঘাতি বিক্ষোভে আগের সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর হিমালয়ের দেশটি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

কাঠমান্ডু থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।

প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউদেল তিনজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে শপথ পাঠ করান। এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে এবং দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক সমস্যার জেরে ৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া বিক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে পার্লামেন্ট ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে এক দশকব্যাপী গৃহযুদ্ধ এবং রাজতন্ত্র বিলুপ্তির পর এটিই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা।

সরকারি হিসাবে দুই দিনের বিক্ষোভে অন্তত ৭২ জন নিহত হয়েছে এবং আরো ১৯১ জন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

৭৩ বছর বয়সী সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই আগামী বছর মার্চে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি দুর্নীতিমুক্ত ভবিষ্যত গড়তে আন্দোলনকারীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।

দুর্নীতি, সুশাসন ও মানবাধিকারের মামলায় সুপরিচিত আইনজীবী ওম প্রকাশ আর্যালকে গুরুত্বপূর্ণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার অধীনে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও থাকবে।

দীর্ঘদিনের লোডশেডিং সমস্যার অবসান ঘটানোর জন্য ব্যাপক প্রশংসিত নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সাবেক পরিচালক কুলমান ঘিসিংকে জ্বালানি, অবকাঠামো, পরিবহন ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সাবেক অর্থসচিব ও খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ রমেশ্বর খানালকে দেওয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। বেকারত্ব সংকট মোকাবিলা তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে, যা থেকেই এই গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, নেপালে ১৫-২৪ বছর বয়সীদের এক-পঞ্চমাংশ বেকার। মাথাপিছু জিডিপি মাত্র ১ হাজার ৪৪৭ ডলার।

সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগডেল ও প্রেসিডেন্ট পাউদেলের মধ্যে আলোচনার মধ্য দিয়ে কার্কি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। এই আলোচনায় তরুণদের প্ল্যাটফর্ম ‘জেন জি’র প্রতিনিধিরাও ছিলেন। হাজার হাজার তরুণ কর্মী ডিসকর্ড অ্যাপ ব্যবহার করে কার্কিকে তাদের নেতা হিসেবে মনোনীত করেন।

রোববার কার্কি বলেছেন, তিনি এই পদ নিতে চাননি, তবে রাস্তার মানুষ তাকে এই দায়িত্ব নিতে বাধ্য করেছে।

তিনি বলেছেন, তার সরকার ‘জেন জি’র চিন্তাধারা অনুযায়ী কাজ করবে। তিনি জানান, তরুণরা চান ‘দুর্নীতির অবসান, সুশাসন ও অর্থনৈতিক সমতা’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *