আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সংস্কার কমিশনের ৭০ ভাগ সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব: আসিফ নজরুল

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য টিম হিসেবে কাজ করছে। এরই মধ্যে সুপারিশের প্রায় অর্ধেক বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

রোববার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ছয়টি সংস্কার কমিশনের তাৎক্ষণিক কার্যকর করার মতো প্রায় ৭০ ভাগ সুপারিশ ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, প্রথম যে ছয়টি কমিশন গঠিত হয়, তাদের প্রস্তাবিত সুপারিশের মধ্যে থেকে আশু বাস্তবায়নযোগ্যগুলো বাছাই করে ইতোমধ্যেই অর্ধেকের মত বাস্তবায়ন করেছি। আমাদের ইচ্ছা, ডিসেম্বরের মধ্যেই অন্তত ৭০ শতাংশ সম্পন্ন করে যেতে পারব।

তিনি আরও বলেন, যে সকল সংস্কার প্রস্তাব সংবিধান সংশ্লিষ্ট, সেসব বিষয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন। অধ্যাদেশ বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আমরা সংবিধান পরিবর্তন করতে পারি না।

উপদেষ্টা জানান, কিছু প্রস্তাব সংবিধান সংশ্লিষ্ট হিসেবে উপস্থাপিত হলেও বাস্তবে তা তেমন নয়। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কমিশনের সভাপতির সঙ্গেও আলোচনা করেছি। উদাহরণস্বরূপ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধান কে হবেন, তা কেবল কার্যপ্রণালীর বিধি পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব; সংবিধান সংশোধনের দরকার নেই।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, কিছু প্রস্তাবের পুনরাবৃত্তি ছিল, কিছু তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে মনে হয়েছে।

আবার কিছু প্রস্তাবে নিয়মিত কার্যক্রমের কথা উল্লেখ রয়েছে, যেমন দুর্নীতি দমন বিষয়ক কৌশলপত্র তৈরি।

আইন উপদেষ্টা জানান, বাকি পাঁচটি কমিশনের কোন সুপারিশগুলো বাস্তবায়নযোগ্য তা নিরূপণে বিদ্যুৎ,
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে কাজ চলছে। কিছু সুপারিশের বাস্তবায়ন ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।

সরকার আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্তে অবিচল রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, একবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে আর কোন আইনি সংশোধন আনা যাবে না, কারণ তা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। সে কারণেই প্রয়োজনীয় সব আইনি সংস্কার ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আপনাদের কথা আমাকে খুব আশাবাদী করেছে। সবাই ঐক্যমত্যের ওপর ভিত্তি করে একটি ভালো সমাধান চায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মানুষের নিয়ত। আমাদের নিয়ত যদি গণভ্যুত্থানের ঐক্য সংরক্ষণ করা, দেশে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার সুযোগ না দেওয়া এবং নিজেদের বিপদমুক্ত রাখা হয়, তাহলে সমাধান কঠিন হবে না, ইনশাআল্লাহ।

‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও সভায় অংশ নেন।

জাতীয় ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার সভাটি পরিচালনা করেন।

সভায় কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।

বিএনপি, এনসিপি, জামায়াত ইসলামী, গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *