শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনের ৩০ তম বার্ষিকী উপলক্ষে ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ অনুষ্ঠিত সভায় উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ এর নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি-৫ অর্জনকে এগিয়ে নিতে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
তিন দশক পরে, আমাদের অগ্রগতি এবং অসমাপ্ত কাজ বর্তমান গতিতে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি-৫ অর্জন তুলনামূলকভাবে অসম্ভব। তিনি ভাষণে বলেন,আমরা সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে,জলবায়ু সংকটে এবং নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণে সাফল্য যেমন দেখেছি, ঠিক তার বিপরীত অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়েও যেতে দেখেছি। সমস্যাটি দৃষ্টিভঙ্গি নয়, বরং অসম জাতীয় অগ্রাধিকারের। তাই আমাদের বিবেক এবং হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে সত্যিকার অর্থে একটি যত্নশীল সভ্যতার সমাজ গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র উল্লেখ করে বলেন,শিক্ষায় লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা, লিঙ্গ- প্রতিক্রিয়াশীল বাজেট প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতি, নারীদের শ্রমশক্তির বাজারে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন স্কোর অর্জন অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। তবুও আমরা জানি যে এটি যথেষ্ট নয়। সামাজিক রীতিনীতি,অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং বিশ্বব্যাপী নারীর ভাষাজ্ঞান ও স্কীলের সংকট এখনও নারীদের পিছিয়ে রাখে। আমাদের যা প্রয়োজন তা হল রূপান্তর – স্বেচ্ছাসেবী অঙ্গীকার থেকে বাস্তবায়নযোগ্য অঙ্গীকারে স্থানান্তর।
উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, নারীরা বাংলাদেশের ইতিহাসকে রূপ দিয়েছেন – আমাদের ১৯৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত যা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সংস্কারের পথ প্রশস্ত করেছে। এই চেতনার দ্বারা পরিচালিত বাংলাদেশ ২০২৫-২০৩০ সালের জন্য চারটি প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করতে পেরে গর্বিত :
১.নারী ও শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ২০২৫ সালের মধ্যে একটি যৌন হয়রানি প্রতিরোধ অধ্যাদেশ প্রণয়ন,দেশব্যাপী দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিষেবাসমূহ পৌঁছে দেয়া।
২.নারীর অদৃশ্য কাজের স্বীকৃতি: ২০২৭ সালের মধ্যে একটি গৃহস্থালি উৎপাদনমূলক স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট প্রতিষ্ঠা করা যাতে অবৈতনিক সেবামূলক কাজের মূল্য নির্ধারণ করা যায়—জিডিপির ১৮.৯%, যার বেশিরভাগই নারী।
৩.ক্ষমতার টেবিলে নারীর সমান আসন:- জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো কমপক্ষে ৩৩% নারী প্রার্থীকে অংশগ্রহণ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা।
৪.জবাবদিহিতার সাথে সমতাভিত্তিক অর্থায়ন: ফলাফলের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে লিঙ্গ-প্রতিক্রিয়াশীল বাজেট সম্প্রসারণ করা।
এই চারটি—নিরাপত্তা, স্বীকৃতি, সমতা এবং জবাবদিহিতা প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য আমাদের এজেন্ডা গঠন করে। কিন্তু কোনও দেশ একা সফল হতে পারে না। বাংলাদেশ একটি বাধ্যতামূলক বিশ্বব্যাপী জবাবদিহিতা কাঠামোর আহ্বান জানিয়েছে। তিনি বলেন,
ত্রিশ বছর আগে, বেইজিং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছিল। আজ, আসুন আমরা এটিকে কর্মভিত্তিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে সম্মান করি। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং লিঙ্গ সমতার ভিত্তি হিসেবে সাউথ-ফোর কেয়ার এজেন্ডাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। শ্রম বাজারে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কেয়ার ইকোনমি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে তিনি মন্তব্য করেন। একইসাথে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা মনে করি যে একটি পরিকল্পিত অর্থনীতি কেবল গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক চাহিদা পূরণ করে না বরং দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির চালিকাশক্তি হিসেবেও কাজ করে। যত্নমূলক সেবা খাত উন্নত, নিরাপদ এবং দক্ষ কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য উল্লেখযোগ্য সুযোগ প্রদান করে ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়।
তিনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, বাংলাদেশ গর্বিত যে, দক্ষিণ এশিয়ায় উদীয়মান নেতৃত্ব হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। টেকসই নীতিগত ব্যবস্থা, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় এবং অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কেয়ারগিভিং ব্যবস্থা এবং পরিসেবাগুলোকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কর্মসূচি শুরু করেছি। বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো তরুণদের যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতার বিকাশ ঘটানো এবং দক্ষতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান নিশ্চিতের জন্য কাজ করা। কর্মশক্তির উন্নয়ন এবং সকলের জন্য মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করার জন্য সেবাখাতের ব্যাপক প্রচার অপরিহার্য বলে তিনি উল্লেখ করেন। উপদেষ্টা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গতিশীলতা রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক পরিবর্তনের মধ্যে বিদ্যমান উদ্যোগ বাস্তবায়নে এবং রূপান্তরমূলক সেবা ব্যবস্থাপনার দিকে দেশের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
প্রতিনিধিদলে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ফিরোজ উদ্দিন খলিফা, যুগ্মসচিব দিলারা বেগম, উপসচিব তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া প্রমূখ।